৪৩ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি ফুলবাড়ীর উপশহর প্রকল্প 

আমিনুল ইসলাম, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে উপশহর প্রতিষ্ঠায় ১৯৭৯ সালে গৌরীপাড়া এলাকায় ফুলবাড়ী-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর প্রান্তে ১২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ৪৩ বছরেও প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হওয়ায় অধিগ্রহণ করা জমি ক্রমান্বয়ে চলে যাচ্ছে ব্যক্তিবিশেষের দখলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফুলবাড়ীর আবাসন সংকট নিরসনকল্পে ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরে দিনাজপুর ল্যান্ড অ্যাকোয়ার কেস নং-৩৮/১১-এর মাধ্যমে কানাহার এলাকার জেএল নং ৫২-এর ১০ দশমিক ৯৪ এবং গৌরীপাড়া এলাকার জেএল নং-৫১-এর দশমিক ৮৫ সহ মোট ১১ দশমিক ৭৯ একর জমি হাউজিং এস্টেট বরাবর অধিগ্রহণ করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। অধিগ্রহণ করা এই জমির দক্ষিণে ফুলবাড়ী-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক, পূর্বে জিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, পশ্চিমে মহিলা কলেজ এবং উত্তরে ফসলি জমি রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, অধিগ্রহণ করা প্রায় ১২ একর পরিত্যক্ত জমিতে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে উপশহরের জন্য স্থাপিত কয়েকটি বিদ্যুতের পিলার ও চারদিকের পাকা রাস্তা। পরিত্যক্ত জমি দখল করে কেউ শুরু করেছে চাষাবাদ, আবার কেউ অবকাঠামো নির্মাণ করে গড়ে তুলেছে একাধিক স্থাপনা।ফুলবাড়ী ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার উদ্বোধন করেলেও ১৯৮৪ সালের ২৪ মার্চ সরকার পরিবর্তনের পর আর আলোর মুখ দেখেনি। এরপর থেকে অধিগ্রহণ করা জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় ১৯৯১ সালে হাউজিং এস্টেট ওই জমি ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের নামে একসনা লিজ প্রদান করে। এ কারণে ওই বছরের ১৩ নভেম্বর ১৯২৩ নং স্মারকমূলে ফুলবাড়ী হাউজিং এস্টেটের জায়গাটি হাউজিং এস্টেট প্রকল্পের পক্ষে চেয়ারম্যান ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ কানাহার ও গৌরীপাড়া মৌজায় যথাক্রমে ১৯৯২ ও ৯২৪ হোল্ডিং খোলা হয়। তারপর থেকে উপজেলা পরিষদ প্রকাশ্যে নিলামের মাধ্যমে উপশহরের জমি লিজ দিয়ে রাজস্ব আদায় করত। তবে ২০২১ সালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ উপশহরের জমি উপজেলা পরিষদ থেকে ফেরত নেয়। তবে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা জমি এখনও বুঝে পায়নি। কিন্তু মূল প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আজও জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। জায়গাটি পরিত্যক্ত থাকায় ইতোমধ্যে বেশিরভাগ অংশ অনেকে দখলে নিয়ে নিজ কাজে লাগাচ্ছেন খেয়ালখুশিমতো। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুমান আক্তার বলেন, উপশহর প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা ১২ একর জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় কৃষক ওই জমি থেকে ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ৪৩ বছর ধরে পরিত্যক্ত ওই জমিতে আমন ও বোরো মৌসুমে চাষাবাদ করা গেলে ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা মূল্যের ১ হাজার ৭৬১ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করা সম্ভব হতো। জমিতে তিন ফসলি আবাদ করা গেলে টাকার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেত।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ দিনাজপুর বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মোর্শেদ আলম বলেন, ফুলবাড়ী উপশহর প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। খুব দ্রুত কাট করে বরাদ্দ দেওয়ার কাজ শুরু করা হবে।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আল কামাহ্ তমাল বলেন, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ফুলবাড়ী উপশহর নিয়ে নথিপত্রের কাজ শুরু করেছে। দ্রুত এর অগ্রগতি দেখা যাবে।

পৌরসভার মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, জায়গার অভাবে পৌরসভা গরুর হাট, পার্ক, কাঁচাবাজার বসাতে পারছে না কিন্তু দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে উপশহর প্রকল্পের এ জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রকল্পটি দ্রুত চালু করা হোক অন্যথায় জায়গাটি পৌরসভাকে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হোক।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই হাউজিং এস্টেট প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন। দ্রুতই প্রকল্পটি দৃশ্যমান হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares
Verified by MonsterInsights