৩য় বাংলাদেশ ইয়্যুথ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক: তারুণ্যের ক্ষমতায়নে বড় শক্তি ইন্টারনেট। ফেস বুকিং নয়; ডিজিটাল শক্তির আধার এই ইন্টারনেটকে বলা যেতে পারে তীক্ষ্ণ তরবারি। তাই নিজেদের কল্যাণে এর ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে দেড় শতাধিক তরুণ প্রতিনিধিদের নিয়ে শুরু হলো তিন দিনের ইয়্যুথ আইজিএফ। বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নমেন্স ফোরামের আয়োজনে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের প্রথম দিন প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান।

উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, তারুণ্যের শক্তিতেই বাংলাদেশ পরবর্তী ইমার্জিং টাইগার হয়ে উঠছে। মোট জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশই তরুণ। কিন্তু এখনো দেশের ৩০ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেটে সংযুক্ত নয়। সরকারি-বেসরকারী অংশীদারিত্বে আমরা আগামী ৫ বছরে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছবো।ইন্টারনেটে তারুণ্যের ক্ষমতায়ন নিয়ে সচিব বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমিকা গ্রহণই হচ্ছে ক্ষমতায়ন। তাই আমরা চাই তাদের নিয়ে আমরা জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে। কিন্তু তারা টিকটক, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের চেয়ে ই-লাইব্রেরিতে বুঁদ হবে। গবেষণায় মনোনিবেশের মাধ্যমে দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুক্ত হবে।

চ্যাটজিপিটি কখনোই সৃজনশীলতার স্থান দখল করতে পারবে না উল্লেখ করে আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন,প্রযুক্তি যেনো আমাদের গিলে না ফেলে; আবার প্রযুক্তিকে ছেড়ে যেনো আমরা হারিয়ে না যাই।বিওয়াইজিএফ চেয়ারপারসন সৈয়দা কামরুন জাহান রিপার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব ফয়সাল আহমেদ ভূবন।উদ্বোধনী সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইয়্যুথ ইন ডিজিটাল অ্যাওয়ারনেস প্রকল্প সমন্বয়ক ও স্টার্টআপ খুলনার দলনেতা মোছাঃ শরীফা আলম।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সামিট কমিউনিকেশনসের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মোঃ ফররুখ ইমতিয়াজ। সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ধনী-গরিব ভেদাভেদ দূর করে সবাইকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করার আহ্বান জানান আইকান দক্ষিণ এশিয়ার জ্যেষ্ঠ পরিচালক নিতুন ওয়ালি। তিনি বলেছেন, তারুণ্যের শক্তিকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। তাদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডকে পূর্ণতা দিতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক জানিয়েছেন, ১ কোটি সংযোগ থাকলেও বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছয় কোটির বেশি। এক দেশ এক রেট বাস্তবায়নের পর এবার তারা ইন্টারনেটের মান উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আশাকরা যায়, আগামী ৫ বছর পর দেশে কোনো ব্রডব্যান্ড সংযোগ ১০০ এমবিপিএস এর নিচে থাকবে না।

এছাড়াও আয়োজকদের পক্ষে বাংলাদেশ ইয়্যুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের মহাসচিব মোহাম্মাদ আব্দুল হক অনু।

সভায় অংশগ্রহণকারীদের ডিজিটাল বাংলার নতুন কর্মী সম্বোধন করে সভাপতির বক্তব্যে বিআইজিএফ চেয়ারপারসন হাসানুল হক ইনু বলেন, ইতিহাস জেনে ও শ্রদ্ধাশীণ হয়ে আপনাদের নতুন ইতিহাস তৈরি করতে হবে। তা না হলে দেশটা স্থবির হয়ে যাবে। তাই আপনাদের নতুন ডিজিটাল অস্ত্র হাতে নিয়ে ইন্টারনেট যুদ্ধে জিততে হলে আমাদের মাথা খাটাতে হবে। প্রত্যেককেই দক্ষ সাইবার কম্ব্যাট হতে হবে। গ্রাম-শহর, ধনী-গরিবের পর এখন সমাজে নতুন বৈষম্য ডিজিটাল বৈষম্য যুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে ইনু বলেন, মাল্টিস্টেকহোল্ডার অ্যাপ্রোচের মাধ্যমে এই বৈষম্য ঘুচতে হবে। ডিজিটাল সাক্ষরতা জোরদারের পাশাপাশি ডিজিটাল ডিভাইস ও সংযোগ সবার জন্য সুলভ ও সহজলভ্য করতে হবে। তাই এর ওপর কর আরোপ করলে তা নাগরিকদের ওপরই বর্তায়।

কৃষক, পোশাক শিল্প ও প্রবাসী আয় এই তিনটি স্তম্ভের সঙ্গে এখন অর্থনীতির চতুর্থ স্তম্ভ ‘ডিজিটাল শিল্প’ বা ‘ডিজিটাল কর্মীবাহীনি’ উল্লেখ করে তথ্য মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সভাপতি বলেন, ডিজিটাল কর্মী হতে বুয়েট পাশ আবশ্যক নয়। এই ডিজিটাল সৈনিকদের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরো এক ধাপ এগেয়ে যাবে।

সেই সমৃদ্ধির জন্য সমতার চশমা দিয়ে নতুন প্রযুক্তিকে দেখতে হবে। আশার কথা, ইন্টারনেট সতমল পৃথিবী তৈরি করেছে। স্বচ্ছতা এনেছে। এক ক্লিকেই ক্ষমতায়িত হয়। ১৬ কোটি মানুষই এর মাধ্যমে কথা বলতে পারে।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশে তারুণ্যের শক্তি এবং বিকাশমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে দুইটি পৃথক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares
Verified by MonsterInsights