“স্বপ্ননীড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের” ৫৯ বেঁদে পরিবারের স্বপ্নপূরণ
শেখ শফিউল আলম লুলু,ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার “স্বপ্ননীড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের” ৫৯ বেঁদে পরিবারের স্বপপূরণ হয়েছে। পথে পথে সাপ ও বানরের খেলা দেখিয়ে যা আয় হত তা দিয়ে আমার ও আমার পরিবারের খাবার যোগাতাম। যেখানে যেতাম সেখানে
বাঁশের কঞ্চি আর পলিথিনের তৈরি ছোট্ট একটি তাবুতে আশ্রয় নিতাম। ঝড় বৃষ্টিতে ভিজতাম। অনেক কষ্টের জীবন ছিল। এখন নিজেদের জমি আর পাকা ঘর হয়েছে।
এখন আর ঘরের চিন্তা নেই। স্বামী সন্তানদের নিয়ে নিশ্চিন্তে বসবাস করছি। আমাদের একটি স্থায়ী ঘরের স্বপ্ন ছিল, আজ তা সত্যি হয়েছে। এভাবেই বলছিলেন বেদে পল্লীর এক গৃহবধু পুতুল। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ঘর তাকে দেওয়া হয়। বেঁদে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূল ধারায় নিয়ে আসতে সরকারের উদ্যোগে ২০২২ সালের ২১ জুলাই ঝিনাইদহে কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জগন্নাথপুর গ্রামের মাজদিয়া বাঁওড়ের ধারে বেঁদে সম্প্রদায়ের বসবাসের জন্য ৫৯ পরিবারের জন্য স্থায়ী ঘর ও জমির দলিল বুঝিয়ে দেওয়া হয়। দেশের ইতিহাসে বেদে সম্প্রদায়ের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় স্থায়ী পল্লি।
সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে পল্লিটি নির্মাণ করা হচ্ছে জলাধারের পাশেই। ঘরের চারপাশে কিছু খোলা জায়গা রাখা হয়েছে। পল্লীর প্রতিটি ঘরের সামনে এখন সবজি চাষ করছে তারা। সবুজ সবজি আর ফুলে ফলে ভরে উঠেছে প্রতিটি বাড়ির চারপাশ। যে সবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে সামান্য কিছু অর্থও আয় করছে অনেকে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি প্রতিনিধি দল “স্বপ্ননীড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের” ওই বেঁদে পল্লীটি পরিদর্শনে করেন। দলটির নেতৃত্ব দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোঃ আব্দুর রাজ্জাক সরকার ও উপসচিব মোহাঃ রফিকুল ইসলাম। পরিদর্শনকালে স্থানীয় বেঁদে সম্প্রদায়ের উপকারভোগী, জনপ্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিয় করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার, স্থানীয় সরকারে উপ-পরিচালক মোঃ ইয়ারুল ইসলাম, ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজীবুল ইসলাম খান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান, কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ হাবিবুল্লাহ ও বারোবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদসহ উপজেলা প্রশাসনের দপ্তর প্রধানরা।
কথা হয় “স্বপ্ননীড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের” বেঁদে সম্প্রদায়ের বিধবা কাঞ্চন বিবি’র সাথে। তিনি জানান, বাঁশের ফালি, কঞ্চি আর পলিথিন দিয়ে তৈরি ছোট্ট ঘরে কেটে গেছে জীবনের ৫৫ বছর। স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়ে ফুলমতিকে নিয়ে জীবনের দির্ঘ সময় কেটেছে পথে পথে। বাড়ি বাড়ি হাতের কারসাজিতে খেলা দেখিয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে উপার্জিত সামান্য আয়ে মিটিয়েছে মা-মেয়ের পেটের ক্ষুধা। এমন অনিশ্চিত জীবনে স্থায়ী জমি আর ঘরের স্বপ্ন ছিল একেবারেই কল্পনাতিত। আমাকে দুই শতক জমির উপর নির্মিত দুইটি রুম, রান্না ঘর ও একটি টয়লেট দেওয়া হয়। এখন আমার জীবনে আর কোন দুঃখ নেই ।