লতা সমাদ্দারকে লাঞ্ছিত, শনাক্ত কনস্টেবল তারেক
এর আগে, লতা সমাদ্দার তার অভিযোগে বলেন, শনিবার সকালে তিনি তার কর্মস্থল তেজগাঁও কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক বাসা থেকে রিকশায় ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনে নামেন। সেখান থেকে হেঁটে (আনুমানিক সকাল ৮টা ২০ থেকে ৮টা ৩৫) তেজগাঁও কলেজের দিকে এগোতে থাকেন। তখন সেজান পয়েন্টের সামনে একজন পুলিশ (পোশাক পরিহিত, মোটরসাইকেল নং: ১৩৩৯৭০) স্টার্ট বন্ধ রাখা মোটরসাইকেলের ওপর বসেছিলেন। তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সদস্য শিক্ষিকার কপালের টিপ নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
ওই সময় ওই শিক্ষিকা পেছন ফিরে গিয়ে তার আচরণের প্রতিবাদ করলে পুনরায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে তিনি শিক্ষিকার গায়ের ওপর চালিয়ে দিয়ে প্রাণনাশের চেষ্টা করেন। শিক্ষিকা সরে গিয়ে প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত বাইকের নিচে পড়ে গিয়ে শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
শনিবার ওই খবর প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। হেনস্তাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রোববার সংসদে দাবি জানান সংসদ সদস্য অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। রোববার (৩ এপ্রিল) সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ দাবি জানান তিনি।
সুবর্ণা বলেন, ‘আমি একটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি, যেটা আমি মনে করি দল-মত নির্বিশেষে বাংলাদেশের জন্য ও বাংলাদেশের নারীসমাজের জন্য অত্যন্ত ঘৃণীত একটি ঘটনা ইভটিজিং। ঘটনাটা আমরা শুনে এসেছি, বখাটে ছেলেপেলে স্কুলের বাচ্চা-বাচ্চা মেয়েদের ইভটিজিং করে। সেই পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত, মাননীয় স্পিকার। কিন্তু আমি যখন দেশের আইন রক্ষাকারী কাউকে ইভটিজিংয়ের ভূমিকায় দেখি, তখন সেটা আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত লজ্জার একটি ঘটনা।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোন সংবিধানে কোন আইনে লেখা আছে যে একজন নারী টিপ পরতে পারবেন না। এখানে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান, বোদ্ধ এমনকি সে বিবাহিত, না বিধবা এগুলো বিষয় নয়; বিষয় হচ্ছে, একটি মেয়ে টিপ পরেছে এবং সে একজন কলেজের শিক্ষক।’
শেরেবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সংগ্রহ করা ভিডিওতে স্পষ্ট করে কিছু বোঝা যাচ্ছে না, তবে পুলিশ সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো তদন্ত করে দেখছি, আদৌ এটা কোনো পুলিশ সদস্য, না অন্য কোনো সংস্থার লোক, সে বিষয়টি স্পষ্ট না হয়ে বলা যাবে না। ওই এলাকায় কোন কোন ইউনিটের পুলিশ সদস্য ডিউটিতে ছিলেন, তার একটি তালিকা তৈরির চেষ্টা চলছে।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লতা সমাদ্দার মোটরসাইকেলের যে নম্বর পুলিশকে দিয়েছেন, সে ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশ বলছে, ওই নম্বরের ‘ল’ সিরিজের একটি এবং ‘হ’ সিরিজের আরেকটি মোটরসাইকেল আছে। ‘ল’ সিরিজের বাইকটি ২০১৬ সালে গুলশান থেকে চুরি হয়ে গেলে সে সময় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর মালিক তার মোটরসাইকেলটি পাননি। পুলিশ এই মালিকের সঙ্গে কথা বলেছে।
একই নম্বরের ‘হ’ সিরিজের মোটরসাইকেলটি যার নামে নিবন্ধন করা, তিন বছর আগে তিনি মিরপুরে এক বাসায় ভাড়া থাকতেন। পুলিশ সেই বাসায় গিয়ে জানতে পারে, প্রায় তিন মাস থাকার পর ওই ব্যক্তি বাসা পরিবর্তন করেছেন। বাড়িওয়ালা তার কোনো ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর দিতে পারেননি। তবে বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ মনে করছে, ওই ব্যক্তি পুলিশ সদস্য নয়। মোটরসাইকেল নম্বরটির কোনো একটি অঙ্ক ভুল হয়ে থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।