রাজশাহীতে বাঁধ নির্মাণ করে পদ্মায় বালু উত্তোলন  ,আটকে গেছে নদীর পানি

নিজস্ব প্রতিনিধি, রাজশাহী:
এবার অনেক আগেই যেন বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। দফায় দফায় বৃষ্টির ফলে পদ্মায় বাড়ছে পানি। রাজশাহী নগরীর নিচে গড়ে ওঠা পদ্মার চরগুলো ধিরে ধিরে ডুবছে। কিন্তু নগরীর তালাইমারী এলাকায় বালু উত্তোলনের জন্য আওয়ামী লীগ নেতার দেওয়া বাঁধের কারণে একপাশে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে পদ্মার। ফলে নগর রক্ষার বাঁধের পারে আটকে আছে পদ্মার পানি। নগরীর তালাইমারী এলাকায় এমন দৃশ্য দেখে রাজশাহীর সচেতন মহলের মাঝে ব্যপাক ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু লিজ না দিলেও পদ্মা থেকে বালু উত্তোলন এখনো বন্ধ হয়নি। ফলে হুমকির মুখে শান্তির সবুজ নগরী রাজশাহী।এমন অবস্থা নগরীর বুলনপুর, পবার শ্যামপুর ও নবগঙ্গা এলাকাতেও বিরাজ করছে।লিজ ছাড়ায় গড়ে উঠছে বালু মহল।

 

অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, নগরীর তালাইমারী এলাকায় গড়ে তুলা রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এক সাংগঠনিক সম্পাদকের করা এই বালুমহালটি জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে গত বছর লিজ দেওয়া হয়নি। এমনকি এ বছরও লিজ দেওয়া হয়নি।

শহররক্ষা বাঁধ রক্ষায় এবার নগরী ও এর আশে-পাশের চারটি ঘাটের একটিও লিজ দেয়নি জেলা প্রশাসকের দপ্তর। তার পরেও গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ঘাটটি জোর করে চালু করে রেখেছেন আজিজুল আলম বেন্টু। বর্ষার পরে নদীতে পানি শুকিয়ে গেলে গত নভেম্বর মাসে পদ্মা থেকে বালু উত্তোলনের জন্য নদীর মাঝে ইট ও বালু ফেলে বাঁধ নির্মাণ করেন বেন্টু। সেই বাঁধ নির্মাণের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে সেটি জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ভ্রাম্যমান আদালত গিয়ে ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর তিনদিন ধরে ওই বাঁধ সরিয়ে নিতে অল্প পরিমাণ কাজ করা হয় ড্রেজার মেশিন দিয়ে। কিন্তু কয়েকদিন পরে আবারও সেই বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। সেটি দিয়ে এখন পর্যন্ত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই বাঁধের কারণে বাঁধের দুই পারে পানি আটকে আছে। ফলে পানি প্রবাহিত হতে পারছে না। এতে করে পদ্মায় পলি পড়ে আরও বড় ধরনের চর পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু বাঁধের ওপর দিয়ে ট্রাকের করে এখনো প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে রাতের আঁধারেই এখন বেশি বালু উত্তোলন হচ্ছে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে।

জানতে চাইলে একজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লিজ নাই কিন্তু বালু উত্তোলন হচ্ছে এখনো নদী থেকে। বাঁধের কারণে পানি আটকে আছে। আমরা কাজ করছি টাকা নিচ্ছি। এখানে আমাদের কিছু করার নাই।

এদিকে পদ্মার এই বাঁধ দিয়ে লিজ ছাড়ায় বালু উত্তোলন নিয়ে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে রাজশাহীর সচেতন মহলের মাঝে। এ নিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমেও অনেকইে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

প্রসঙ্গত, রাজশাহীর চারটি বালুমহালেই লিজ ছাড়ায় এখনো বালু উত্তোলন চলছে। এ নিয়ে গত ২৩ মে কোটি টাকার বালু লুট শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর প্রশাসন নড়ে-চড়ে বসে। সব কয়টি বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে সেই নির্দেশনা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, শহর রক্ষা বাঁধ রক্ষা ও নদী বাঁচাতে এবার কোনো বালুমহাল লিজ দেওয়া হয়নি। তারপরেও রাতের আঁধারে কেউ কেউ বালু উত্তোলন করছেন। এটি খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। আমরা এ নিয়ে কঠোর অবস্থানে যাবো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares