যশোরে খেজুরগাছের সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে গাছিরাও
যশোর প্রতিনিধি: দুয়ারে কড়া নাড়ছে শীত। এখনো শীত জেঁকে না বসলেও জেলার সবখানে খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হয়েছে। মাঠের আইলে, রাস্তার পাশে, পুকুরপাড়ে অযত্নে বেড়ে ওঠা খেজুরগাছ থেকে শীত মৌসুমে জেলার কয়েক হাজার গাছি রস ও গুড় উৎপাদন করে। এতে তারা যে অর্থ উপার্জন করেন, তাতে তাদের বছরের অর্ধেক সময়ের জীবিকার ব্যবস্থা হয়।
বিভিন্ন কারণে খেজুরগাছ কমে গেছে। আগে প্রায় প্রতিটি ঘরে রস গুড় উৎপাদন হতো, এখন কৃষক খেজুরের রস উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অধিক পরিশ্রম হওয়ায় নতুন প্রজন্মের কৃষকের মধ্যে রস-গুড় উৎপাদনে তেমন আগ্রহ নেই।
যশোরে প্রায় ১৬ লাখ খেজুরগাছ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ গাছে রস উৎপাদন হয়। যশোরে যেমন কমছে খেজুরগাছ, তেমনি হারিয়ে যাচ্ছে গাছ থেকে রস সংগ্রহকারী গাছি সম্প্রদায়ও। এসব সংকটে দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে খেজুরের রস।আর বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে এ রসের স্বাদ, পাটালি গুড় বা রসে ভিজানো পিঠা-পায়েস খাওয়ার আনন্দ। একসময় গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে খেজুরগাছ কেটে রস সংগ্রহ করতেন গাছিরা।
জেলা-উপজেলার প্রতিটি গ্রামে অসংখ্য খেজুরগাছ ছিল তখন প্রতিটি গ্রামে গড়ে আট থেকে ১০ জন পেশাদার গাছি পাওয়া যেত। এখন আর সেদিন নেই। গাছিদের পেশা বদল, নতুন করে এ পেশায় কেউ না আসার কারণে প্রতি গ্রাম তো দূরে থাক, কয়েক গ্রাম খুঁজলেও একজন পেশাদার গাছির সন্ধান মিলবে না।
ভবারবেড় গ্রামের গাছি ইউনুচ আলী জানান, শীতকালে আগে শহর থেকে মানুষ দলে দলে আসত খেজুরের রস খেতে। সন্ধ্যায় গ্রামীণ পরিবেশ খেজুরের রসকে কেন্দ্র করে জমে উঠত। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ করা যেত সেই সময়ে। এখন আর তেমনটি লক্ষ করা যায় না।
যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, জেলায় প্রায় ১৬ লাখ খেজুরগাছ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ গাছে রস উৎপাদন হয়।এসব খেজুরগাছ থেকে বছরে পাঁচ কোটি লিটারের বেশি রস উৎপাদিত হয়। এই রসে বছরে গুড় উৎপাদিত হয় প্রায় ৫২ লাখ কেজি। যার মূল্য শত কোটি টাকার বেশি। বর্তমানে জেলায় ১৩ হাজার ১৭৩ জন গাছি রয়েছেন।