ভোলার ছেলে গোল্ড মেডেলিস্ট জাকিরের সফলতার গল্প
এম. শামীম,করেসপনন্ডেন্ট দুলারহাট:
প্রতিদিনই কোন না কোন অসহায় পরিবার থেকে বিসিএস ক্যাডার এবং বাংলাদেশ ভালো ভালো প্রতিষ্ঠান চাকরির সুযোগ করে নিচ্ছেন অসহায় পরিবারের সন্তানরা যাদের বাবার ছিল না কোটি কোটি টাকা ছিল না অর্থ তারপরও নিজের চেষ্টায় এবং নিজের মনোবল দিয়ে সফল হওয়া অনেকের গল্পের মত এবার আমরা শুনবো ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট থানার নুরাবাদ ইউনিয়ন এমন এক ছেলের ইতিহাস
ভোলার ছেলে গোল্ড মেডেলিস্ট জাকির
অসচ্ছল পরিবারে জন্ম নেয়া এক স্বপ্নময়ী বালক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. জাকির হোসনে। তিনি একাডেমিক সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য ২য় বারের মত এএফ মুজিবুর রহমান গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। বর্তমান তিনি নিজ বিভাগেরই প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
তার এ সফলতার পিছনে রয়েছে অনেক ত্যাগ ও কষ্টের গল্প।শিশুকাল থেকেই প্রচন্ড অর্থ কষ্টে ভুগেছেন। অন্য আর ১০টা ছেলের মত আড্ডাবাজি করে কখনো সময় নষ্ট করতেন না। সারাদিন বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতেন। এর ফলাফল ও হাতেনাতে পেয়েছেন । পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে পেয়েছেন মেধাবৃত্তি। এসএসসি ও এইচএসসিতে ও ভালো ফলাফলের ধারা অব্যাহত রেখে জিপিএ ৫ পেয়েছেন।
ভালো শিক্ষার্থী হওয়ায় শিক্ষকরাও সহযোগিতা করেছেন সব সময়।
স্কুলের বেতন, প্রাইভেট খরচের টাকা কোনো কিছুই দিতে হয়নি তাকে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং করার টাকা ও কলেজের শিক্ষকরা দিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতি নেয়ার সময় ও থাকা-খাওয়ার খরচ মেটানোর জন্য রাত ১০টা পর্যন্ত টিউশনি করতে হয়েছে তাকে ।তারপর মেসে ফিরে গভীর রাত জেগে চলেছে ভর্তি যুদ্ধে জয়ী হওয়ার অদম্য প্রচেষ্টা।
তারপর ২০০৯-১০ সেশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেন।
বাল্যকাল থেকেই গণিতের প্রতি আলাদা টান ছিল বলে ভর্তি হলেন গণিত বিভাগে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পড়ালেখা, থাকা-খাওয়ার খরচ মেটানোর জন্য টিউশনি করতে হয়েছে। অর্থের অভাবে কোনো কোনো দিন একবেলা খেয়েও কাটিয়েছেন। তা সত্ত্বেও কোনোদিন ক্লাস মিস করেননি জাকির ।
সামনের সারিতে বসে শিক্ষকদের লেকচার মনোযোগ সহকারে খাতায় তুলতেন। আবার তা বাসায় গিয়ে রিভিশিন দিতেন। সেমিনার লাইব্রেরী থেকে বিভিন্ন রেফারেন্স ঘেঁটে নোট করে পড়তেন। কোনো কিছু না বুঝলে শিক্ষকদের কাছে যেতেন।
রিজার্ভ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ঋণ নিতে পারি: প্রধানমন্ত্রী
এভাবে পড়ালেখা করে অনার্সে গণিত বিভাগের সর্বোচ্চ সিজিপিএ ৩.৯২ অর্জন করেন। অর্নাসে ভালো ফলাফল করায় ১ম এ এফ মুজিবুর রহমান গোল্ড মেডেল পান জাকির হোসেন।
এ অর্জন তাকে আরো বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। মাস্টার্সেও ভালো ফলাফলের ধারা বজায় রেখে সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৪.০০ পেয়ে রেকর্ড করেন জাকির। মার্স্টাসের এ অভাবনীয় ফলাফলের কারণে তিনি আবারো এ এফ মুজিবুর রহমান গোল্ড মেডেল পান।আর এসকল সফলতা পেছনে তার বাবার অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি
তার বাবার কিছু কথা
নিজের শত কষ্টেও নাকি নিজের ছেলেকে কখনো স্কুলে যেতে বাধা দেয়নি তিনি
যদিও তার অনেক কষ্টে দিন কাটতো কিন্তু সে ছেলের আগ্রহ দেখে সে নাকি সব সময় তার ছেলেকে সাহস এবং উৎসাহ দিয়েয়েছেন ।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো জাকির হোসেন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে নাকি তার হালের গরু ও তিনি বিক্রি করে ছেলের পড়াশোনার পেছনে খরছ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন তার কাছে নাকি এখন আর ঐ কষ্টকে কষ্ট মনে হয় না।
সে শুধু এটাই মনে করে আল্লাহ দিয়েছে তাই হয়েছে
আজকের দিনগুলোর কাছে ঐ দিনগুলো নাকি তুচ্ছ ।
তাই আমরা চাই জাকির হোসেনকে অনুসরণ করে যেন হাজারো জাকির হোসেন তৈরি হতে পারে ।