ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা

নিউজ ডেস্ক

 বাজেটের বড় ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাতের চাপ দ্বিগুণ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। বাড়তি এ লক্ষ্যমাত্রা চাপে থাকা ব্যাংক খাতকে আরও চাপে ফেলবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। সর্বমোট ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটে ঘাটতি রয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল এ ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।

কিন্তু ব্যাপকহারে ঋণ নেওয়ার সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪২১ কোটি টাকার করা হয়েছে। ৩১ মে পর্যন্ত সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে ৬৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। করোনায় রাজস্ব আদায় কমে যাওয়া এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে সরকার।

সরকারের ব্যাংকঋণ নির্ভরতা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুব ভালো না।

আমানতের অবস্থা খারাপ, পরিচালনাগত ত্রুটি আছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি ঘাটতি বিদ্যমান। পুরো ব্যাংক খাত সমস্যায় আছে। এমন অবস্থায় বাজেটে ব্যাংক ঋণনির্ভর হলে এ খাত আরও চাপে পড়বে। এতে বেসরকারি খাত বঞ্চিত হবে। তাই সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে বিদেশি উৎস থেকে কম সুদে ঋণ আনার পরামর্শ দেন সাবেক এ গভর্নর।

ব্যাংকাররা জানান, করোনার প্রণোদনা হিসেবে সরকার ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা দেবে। এর বড় অংশ ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে। অর্থনীতির এ খারাপ সময়ে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেওয়া হলে ব্যাংকগুলোকে চাপে ফেলবে। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা চাহিদামাফিক ঋণ নিতে পারবেন না। ফলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে।

এর আগে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ায় এ খাত থেকে ঋণ পাওয়ায় সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ১৯ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সরকার নিয়েছিল মাত্র ৯২৬ কোটি টাকা। তার আগের বছর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল, পরিশোধ করেছিল তার চেয়ে ১৮ হাজার ২৯ কোটি টাকা বেশি। তার আগের অর্থবছরে নিয়েছিল মাত্র ৪ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছর সরকারের ঋণ কমেছিল ৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারের রাজস্ব আয় কমেছে। আবার করের হার বৃদ্ধি এবং আইনকানুন কঠোর করায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যও কমিয়ে এনেছে। ফলে সরকারের এখন একটাই পথ ব্যাংক ঋণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares