বিএনএনআরসি’র অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মাল্টি-স্টেকহোল্ডার পার্টনারশিপ প্ল্যাটফর্মে যোগদান
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ এনজিও নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি) অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মাল্টি-স্টেকহোল্ডার পার্টনারশিপ প্ল্যাটফর্মে যোগ দিয়েছে। প্ল্যাটফর্মের মূলমন্ত্র হল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপের জন্য একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলনকে জোরদার করা।
অ্যান্টিবায়োটিক হলো অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ড্রাগ। এগুলো হলো এমন একধরনের ওষুধ যা মানুষ এবং পশু উভয়ের শরীরেই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এক্ষেত্রে তারা হয় ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে, নয়তো ব্যাকটেরিয়ার দৈহিক বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার রোধ করে। তবে অ্যান্টিবায়োটিক কেবল নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়াঘটিত ইনফেকশনই প্রতিরোধ করে। ভাইরাসের উপর এরা কোনো
প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হলো এমন একটি অবস্থা যা তখনই ঘটে, যখন কতিপয় ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার ক্ষমতা অর্জন করে। এসব ব্যাকটেরিয়াকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া। এরা অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতিতে অভিযোজিত হয়ে যায় বলে, নিজেদের স্বাভাবিক গতিতে বেড়ে উঠতে ও বংশবিস্তার করতে পারে।ফলে মানুষ বা পশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। আগে যে অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে তাদের রোগ সেরে যেত, এখন আর সেই অ্যান্টিবায়োটিকে তা সারে না, বরং ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এসব রোগাক্রান্ত মানুষ বা পশু অন্য কারো উপস্থিতিতে হাঁচি-কাশি প্রভৃতির মাধ্যমে তাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দেয়,এবং তারাও একই রকম দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও দেশগুলোকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স এর আসন্ন সঙ্কট সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, আমরা মনে করি অ্যান্টিবায়োটিক (অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের জন্য) এর প্রতিরোধ ক্ষমতা ফুরিয়ে যাচ্ছে এবং শীঘ্রই বিশ^ আরেকটি জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হতে পারে, যা বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারির চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব,অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের গ্লোবাল লিডারস গ্রুপ-ন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স এর বিরুদ্ধে অ্যাকশনের জন্য একটি স্বতন্ত্র প্যানেল। চতুর্পাশি^ক সহায়তা করা-জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিমেল হেলথ (ডব্লিউওএইচ)-এএমআর পার্টনারশিপ প্ল্যাটফর্মে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে কাজ করছে।
এই প্ল্যাটফর্মের লক্ষ্য হল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, আন্তর্জাতিক এবং বহু-মাত্রিক অংশীজনদের একটি ফোরাম যা মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ এবং পরিবেশগত বাতায়ন জুড়ে অংশীজনদের একত্রিত করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হিসাবে জীবাণুরোধী ওষুধ সংরক্ষণ করতে এবং ওয়ান হেলথ পদ্ধতির অধীনে তাদের দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সহায়তা করছে।
এএমআর বিষয়ে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করা। পাশাপাশি সমন্বিত, বহুমাত্রিক,অন্তর্ভুক্তিমূলক এক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক হুমকি মোকাবেলায় ঐক্যমত্য গড়ে তোলা এবং লক্ষ্যযুক্ত পদক্ষেপগুলিকে সংগঠিত করা। একইভাবে ২০৩০ এজেন্ডা এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনে অবদান রাখা এবং এক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা। ভবিষ্যতের মহামারি প্রতিরোধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ এবং মহামারিকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এএমআর-এর অ্যাডহক ইন্টারএজেন্সি কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের ২০১৯ সালের রিপোর্ট জাতিসংঘের মহাসচিবকে, অপেক্ষা করার সময় নেই: ড্রাগ-প্রতিরোধী সংক্রমণ থেকে ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করা; শিরোনামে,বিষয়-ভিত্তিক অংশীদারিত্বমূলক প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠার সুবিধার্থে কাজ করার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। বিশেষ করে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে লক্ষ্যগুলির অর্জন ও বাস্তবায়নের জন্য সংস্থাগুলির দ্বারা কার্যক্রম পরিচালিত করা। সেই সাথে সরকার, বেসরকারি খাত এবং মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্য, কৃষি এবং খাদ্য উৎপাদনের প্রতিনিধিত্বকারী নাগরিক সমাজের সাথেও কাজ করা।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স নিয়ে বিএনএনআরসি’র উদ্যোগসমূহ: বিএনএনআরসি-এর উদ্যোগে দেশের চলমান কমিউনিটি রেডিওগুলোর মাধ্যমে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স এর আসন্ন সঙ্কট সম্পর্কে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি করছে। ইতোমধ্যে কমিউনিটি রেডিওগুলো সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অংশগ্রহণে উক্ত আলাপচারিতা আয়োজন ও সম্প্রচার করেছে। আলাপচারিতাতে মূলত অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কী, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কেন ঘটে, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কেন বাড়ছে? অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হবার কারণ কী, কারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধের উপায়, এসডিজি অভীষ্ট -৩ (সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ) বাস্তবায়নে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কেন জরুরি, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের যেমন সাধারণত জনগণ, চিকিৎসক, ফার্মেসীগুলোর বিক্রেতা এবং সরকার-এর করণীয় কি হতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। কমিউনিটি রেডিওগুলোর উক্ত আলাপচারিতাতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় পর্যায়ের ওষুধ ক্রেতা, ওষুধ বিক্রেতা তথা ফার্মেসীগুলোর বিক্রেতা এবং চিকিৎসকবৃন্দ।
উক্ত টকশো বা আলাপচারিতা অনুষ্ঠানগুলো কমিউনিটি পর্যায়ে বেশ সাড়া ফেলেছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় জনগণ তথা রোগীরাও ফার্মেসীতে গিয়ে নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক কেনা থেকে বিরত থাকছেন। পাশাপাশি ফার্মেসীগুলোও চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি না করার ব্যাপারে উদ্যোগী হচ্ছেন। এছাড়াও, বিএনএনআরসি জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য সাংবাদিকদের জন্য ফেলোশিপ প্রদান করছে। এর উদ্দেশ্য হলো এই বিষয়ে ইনডেপথ ও অনুসন্ধানমূলকপ্রতিবেদন তৈরি করে জনসাধারণের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা পাশাপশিএ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। ইতিমধ্যে ফেলোশিপপ্রাপ্ত সাংবাদিকগণ ১০ টি প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার
করেছেন।
বিএনএনআরসি নলেজ-ড্রাইভেন মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট-এর ভূমিকায় দেশীয় আঞ্চলিক, ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে কাজ করে থাকে বিএনএনআরসির কর্মপ্রচেষ্টাহলো গ্রামীণ জনপদে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর তথ্য অধিকার, সুশাসন এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের দ্রুত পরিবর্তনশীল বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ-সুবিধাসমূহ বিবেচনায় রেখে জ্ঞানভিত্তিক ও চলমান ইস্যু
বিবেচনায় রেখে গণমাধ্যমের উন্নয়ন।
উল্লেখ্য, বিএনএনআরসি একটি গণমাধ্যম উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা যা ২০০০ সালে আত্মপ্রকাশ করে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরকার্যালয়ের অধীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে নিবন্ধিত হয়। এটি জাতিসংঘের ইকোনোমিক এন্ড সোশ্যাল কাউন্সিল এর বিশেষ পরামর্শক মর্যাদাপ্রাপ্ত সংস্থা এবং সংস্থাটি তথ্য সমাজ বিনির্মাণে অবদানের জন্য ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি জাতিসংঘের পুরস্কার-২০১৬ এর বিজয়ী এবং ২০১৭ এবং ২০১৯, ২০২০, ২০২১ এবং ২০২৩- এর চ্যাম্পিয়ন ।