বরগুনায় করোনায় আক্রান্তদের প্রিয় ব্যাক্তি ডা. কামরুল আজাদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিন হাজার ৩৩৩ জনে। মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখন দুই লাখ ৫২ হাজার ৫০২।ইতালিকেও ছুঁতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সম্প্রতি এমনটিই খবর প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক সকালের ডাক সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
তবুও আক্রান্ত হয়ে মানুষ ছুটে চলেছেন হাসপাতাল কিংবা ডাক্তারদের কাছে,হতাশার খবর যেমন আছে তেমনি আছে আশার বাণীও।প্রচলিত কথা অনুযায়ী করোনায় আক্রান্ত ব্যাক্তির কাছে গেলেই নাকি অন্যও সংক্রমিত হয়,এই ধারণা কিছু ক্ষেত্রে সত্যি হলেও ভুল ধারণাও আছে।
করোনায় আক্রান্তদের ফেলে রেখে অতি আপনজন দূরে সরে যায় কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মায়া,মমতা, ত্যাগ বিসর্জন দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সরা।
ব্যতিক্রম নয় ডা. মোঃ কামরুল আজাদ।কর্মরত আছেন বরগুনা সদর হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) হিসেবে। দেশে মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার সময় থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।দিন নেই রাত নেই সারাক্ষণই করোনা আক্রান্তদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।তিনি ও তার টিমের সবাই যেমন দক্ষতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন তেমনি প্রশংসাও কুড়াচ্ছেন পুরো বরিশাল জুড়ে।
করোনা আক্রান্তদের প্রথম শর্তই হচ্ছে নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবারাহ দেয়া, আর সেটিই তিনি ও তার টিমের সবাই দিয়ে যাচ্ছেন।
মি. আজাদের তত্বাবধানে চিকিৎসাধীন করোনা পেসেন্ট গুলো যেন খুঁজে পেয়েছেন একজন বিশ্বস্ত বন্ধু,অভিভাবক।কিছুক্ষণ পর পরই আক্রান্তদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন তিনি।
পালাক্রমে তার টিমের সেবিকারা রাত জেগে সেবা দিচ্ছেন করোনায় আক্রান্তদের। রাতের যেকোন সময় হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ চলে গেলে করোনা রোগীরা অক্সিজেনের অভাব বোধ করেন।যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকেন করোনায় আক্রান্তরা কিন্তু তখনই ছুটে আসে তার টিমের দায়িত্বে থাকা সেবিকারা।বিশেষ করে ডা. শাহীন, নার্স মাহবুব,শাহনাজ ও কম বয়সী কয়েকজন সেবিকার করোনায় আক্রান্তদের সেবার হাত খুবই অসাধারণ। 

১৪ দিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরলেন গাজী ফায়জুল্লাহ
এই হাসপাতাল থেকে ইতোমধ্যে ডা. কামরুল আজাদ ও তার টিমের চিকিৎসা সেবাই মুগ্ধ হয়ে, সুস্থ্য হয়ে আল্লাহর ইচ্ছায় বাড়ি ফিরেছেন অনেকেই।
তাদের মধ্যে একাত্তর বয়সী মৌজে আলী ফিরে পেয়েছেন যেন এক নতুন পৃথিবী, তিনিও ১৭ দিন পরে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরলেন, স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে প্রাণ খুলে দোয়া করেছে সবাইকে হাসপাতাল ছাড়ার মূহুর্তে।

১৮ দিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরলেন মৌজে আলী
চিকিৎসার শেষ সময়ে ইনজেকশন ক্রয় করার সামর্থ্য ছিলো তার। খবর পেয়ে সেটারও ব্যাবস্থা করলেন ডা. কামরুল আজাদ।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরলেন দীর্ঘ ২৩ দিন পর মৃত্যু পথ যাত্রী নুরজাহান বেগম (৫৫)।ডা. আজাদ বললেন উনার আর মৌজে আলীর আশা তো আমরা ছেড়েই দিলাম, অবশ্যই আল্লাহ হায়াত রেখেছেন বিধায় বেঁচে গেছে। 

টানা ২৩দিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরলেন নুরজাহান বেগম
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ্য হয়ে দীর্ঘ ১৭ দিন পর বাড়ি ফিরলেন হাসিনা বেগম(৭৯)।ডাক্তার নার্সদের পাশাপাশি এক মহীয়সী নারীর ন্যায় রাত জেগে শ্বাশুড়ির সেবা করেছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মাহমুদা খানম।আমি দেখেছি সারারাত শ্বাশুড়ির সেবা করতে করতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে পাশেই ঘুমিয়ে পড়তেন তিনি।সেবা করতেন ডাক্তারি পড়ুয়া তার মেয়ে ঋধিকাও। 

১৭ দিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরলেন হাসিনা বেগম
তারাও ডা. কামরুল আজাদ ও তার টিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।দোয়া করেছেন।এখনও অনেক রোগী ভর্তি আছেন করোনা ওয়ার্ডে।
সবাইকেই চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সাহস আর মনোবল বাড়িয়ে তুলছেন ডা. কামরুল আজাদ, ডা. শাহীন ও তাদের পুরো টিম।শিখিয়ে দিচ্ছেন কিভাবে ব্যায়াম ও শ্বাস ধরে রাখতে হবে অতঃপর ছেড়ে দিতে হবে।
একজন ডাক্তারের আর কি পাওয়া আছে, যখন সুস্থ্য হওয়া সেই মানুষটি যার জন্যেই ডাক্তার, নার্স, আয়া ও তার আপনজন কিংবা প্রিয়জন দিন রাত সেবা দিয়ে, কাঁদতে কাঁদতে দু’চোখকে পাথর করে অবশেষ শান্তির নিঃশ্বাস টুকু ছেড়ে মহান আল্লাহর কাছে দু’ হাত তুলে দোয়া করেন।
উল্লেখ্য,গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়ানোর পর গোটা বিশ্বকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে করোনাভাইরাস। এতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৯২ লাখ ৭২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা সাত লাখ ১৭ হাজারের বেশি। তবে সুস্থ রোগীর সংখ্যা এক কোটি ২৩ লাখ ৭৩ হাজার প্রায়। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। আর এতে প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ।