প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এক সম্ভাবনাময়ী ব্যবসায়ী
স্টাফ রিপোর্টার: পর্যটন ও আতিথেয়তা খাতের আরেক ব্যবসায়ী জীবন বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। হতভাগ্য ব্যক্তির নাম আব্দুল জলিল। জানা গেছে, তিনি একটি আদর্শ পর্যটন ফার্ম প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন, এর ক্লায়েন্টদের ভিন্ন স্তরের সেবা প্রদান করার জন্য। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি হোটেল ক্যাটারিং-এ ডিপ্লোমা করতে মালয়েশিয়াতেও যান। এছাড়া তিনি প্রশাসনিক যোগাযোগ দক্ষতা অর্জনের জন্য দ্যা পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে এমবিএ করেন।
সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল জলিল অন্য একটি কোম্পানীর লাইসেন্স ব্যবহার করে ২০১৬ সালে তার ফার্ম ‘জামাল লিংক এয়ারওয়েজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যবসা ভালো করার সাথে সাথে তার ভাগ্য যখন বদলাচ্ছিল, তখন স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা যেমন ইমরুল ও রমজান তার স্বচ্ছলতার দিকে তাদের তীক্ষ্ন দৃষ্টি পড়ে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তারা তার ব্যবসার ২৫% লাভ দাবী করে। ২০২১ সালে আগষ্টে তারা হুমকি দেয় যে, তিনি যদি তাদের দাবী না মানেন তবে, তারা তাকে নির্দয় ভাবে ক্ষতি করবেন। কারণ, তিনি একটি বিএনপি পরিবারের সদস্য। হতাশ হয়ে জলিল সাহেব ছুটে যান জাতীয় পার্টির এম.পি কাজী ফিরোজ রশীদ এর কাছে। কিন্তু, এর কোন সমাধান পাওয়া যায়নি। অবশেষে সে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক গুন্ডাদের সাথে বোঝাপড়া করেন। জানা যায় যে, জনাব জলিলের অনেক অনুরোধের পরে তাকে লাভের অংশ দেওয়ার জন্য ২০২২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত কয়েক মাস সময় দেওয়া হয়।
প্রকৃত পক্ষে, গুন্ডারা কখনই তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না। জনাব জলিল বিদেশে থাকাকালীন সময়ে তারা ২০২২ সালের মে মাসে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয়। দেশে ফেরার পর অনেক চেষ্টা করেও নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফিরিয়ে আনতে পারেন নি। বরং, নিজের প্রতিষ্ঠানেই গুন্ডাদের হাতে তিনি মারাত্মক ভাবে আঘাত পান। জানা গেছে তিনি কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এমন মুহুর্তে তিনি প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তা চাইলেও উল্টো জনাব জলিলের কাছে এক কোটি টাকা দাবী করেন র্যাব কর্মকর্তারা। এমনকি, র্যাব কর্মকর্তারা তাকে তার সম্পত্তি বিক্রি করার পরামর্শ দেন। র্যাব তাকে নিরপরাধ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য দায়ী করে বলে যে, তারা জলিলের প্রতারণার শিকার মানুষদের মধ্যে ঐ টাকা ভাগাভাগি করে দিবে। দেশে কি ধরণের শাসন চলছে তা এই আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর মনোভাবেই প্রকাশ পায়।
ঐ অসহায় ব্যবসায়ী র্যাবের সময়সীমার মধ্যে টাকা ম্যানেজ করতে না পেরে পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে পালিয়ে যান। সূত্র জানায়, জলিল ও তার পরিবারকে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে সময় পার করতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত প্রাণ বাঁচাতে দেশ ত্যাগ করে কানাডায় পালিয়ে যায়। কি ট্র্যাজেডি? রাজনৈতিক গুন্ডারা কিভাবে ব্যবসায়ী, বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের ওপর অত্যাচার করে আসছে, এটি তার আরেকটি উদাহরণ।