পরিক্ষার হলে ছাত্র শিক্ষকের চোর পুলিশ খেলা
মো: এনামুল হক, জবি প্রতিনিধি : পরীক্ষায় সময় হলে শিক্ষকরা গার্ড দেন যাতে কেউ নকল করতে না পারে অথবা দেখে লিখতে না পারে। কিন্তু কেন শিক্ষকদের আলাদা করে গার্ড দিতে হবে! তারা শিক্ষার্থীদের পড়ান এবং সেই পড়াকেই মুল্যায়ন করার জন্য পরীক্ষা নেন। তবে কি শিক্ষার্থীরা সেই পড়া পড়ছেই না! নাকি বুঝতেই পারছে না। যদি বুঝে থাকে বা পড়ে থাকে তাহলে
নকল করার দরকারটা কোথায়!
অনেকগুলা প্রশ্ন চলে আসে পরীক্ষার কথা চিন্তা করলে। আসুন কিছু উত্তর খুজে বের করার চেষ্টা চালাই।
শিক্ষকরা গার্ডে কেন থাকেন?
পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত উত্তরপত্রের প্রয়োজন হয় তখন শিক্ষকরা সেটা বিতরণ করেন। এছাড়া কতজন পরীক্ষা দিচ্ছে সেটির একটি হিসেব রাখেন। পরীক্ষার খাতায় সাইন করে চিহ্নিত করে রাখেন। প্রশ্নে কোন সমস্যা থাকলে সেটিও শিক্ষক সমাধান করার চেষ্টা করেন। কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে কিংবা কোন সমস্যায় পড়লে শিক্ষক সেটি সমধানের চেষ্টা করেন।
শিক্ষার্থীরা কেন নকল করে?
অনেক সময় দেখা যায় পড়া শেষ না হওয়ায় অসৎ উপায় অবলম্বন করে অনেক শিক্ষার্থী। শিক্ষকের চোখ ফাকি দিয়ে ছোট কাগজে আব্র কখনো বিভিন্ন পন্থায় নকল করে থাকে শিক্ষার্থীরা। অনেকে ভয় পায় যে তারা ভুলে যাবে সুত্রগুলো বা সব মনে থাকবে না তাই নকল করে। আবার অন্যদের চেয়ে বেশি নাম্বার পেতে হবে সে কারণেও অনেকে নকল করে। একবার নকল করে ধরা না খেলে সাহস বেড়ে যায় যার ফলে বার বার নকল করার চেষ্টা করে।
কেন শিক্ষার্থীরা নকল করবে, এর পিছনের কারণ কি?
আসলে কারণ খুজতে গেলে দেখা যাবে গোড়ায় গন্ডগোল। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাই এমন যে এখানে পাস না করলে তার মুল্য নেই। একটা সার্টিফিকেট নির্ধারণ করে সামনে একজন সফল হবে নাকি বিফল। এদেশে কেরানীর চাকরিকে সাধুবাদ জানানো হয়। তবে যে ব্যবসা করে তাকে হেয় করা হয়। কিন্তু ভেবে দেখলে দেখা যায় এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই কেরানীর চাকরিগুলা এসে থাকে। আসলে এখানে মুল্য দেওয়াটা অনেক কষ্টের হয়ে যায়। আমাদের দেশের অর্থ সামাজিক অবস্থা তেমন উন্নত না হওয়ায় আমরা স্বপ্ন দেখতে ভয় পাই। এজন্য সরকারি চাকরির পিছনে দৌড়ে মরি।
শিক্ষকদের দ্বায় কোথায়?
বর্তমানে শিক্ষার মান অনেকাংশেই কমে গেছে। যুগের সাথে তাল।মিলিয়ে চলতে গিয়ে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি আমরা। শিক্ষকরা শিক্ষাদানকে তাদের চাকরি হিসেবে ধরে নিয়েছেন। তারা আসেন ক্লাস নেন, আবার চলে যান। স্কুল-কলেজে টিউশন সিস্টেমগুলো আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটা ত হবার ছিলো না। শিক্ষক যদি ক্লাসে ঠিকভাবে পাঠদান করাতেন তাহলে ত আলাদা করে টিউশনের দরকার পড়তো না। একটা অসামাজিক প্রতিযোগিতায় চলছে সমাজ ব্যবস্থা। যেখানে শিক্ষকরা আলোর পথ দেখাবেন, সেখানেই তারাই আলোর দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন। ক্লাসে যা পড়াচ্ছেন সে অনুযায়ী পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে না। কিছুটা কঠিন করার চেষ্টা হরহামেশাই হয়ে আসছে। হ্যা, এখানে যদি চিন্তা করে উত্তর বের করতে হতো তাহলে ঠিকই ছিল। প্রশ্ন আসবে আমার পড়া বা শিখা সব কিছু দিয়ে চেষ্টা করে বের করতে হবে উত্তর। কিন্তু বাস্তবে উলটা ঘটনা। সবই মুখস্ত পড়া। প্রশ্নের প্যাটার্ন পালটে দিলেই হয়ে যাচ্ছে প্রশ্ন। উত্তর মনে করতে হিমশিম খাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
কতই বা মুখস্ত করবে শিক্ষার্থীরা?
বর্তমানে যত পরীক্ষা হয় তার একটা পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে ৮০% প্রশ্নই থাকে মুখস্ত বিদ্যার। বাকি কিছু অংশ থাকে চিন্তা করার। অধিকাংশ স্থানে তাও থাকে না। চিন্তার জন্য কিছুটা সময় দেওয়া প্রয়োজন। তবে মুখস্ত থাকলে সেটার দরকার পড়ে না। প্রশ্ন পাওয়া মাত্রই কলম চলা শুরু।
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের চোর পুলিশ খেলা চলে পরীক্ষার হলে। এখানে শিক্ষা ব্যবস্থা যেমনি দ্বায়ী তার চেয়েও বেশি দ্বায়ী শিক্ষকরা। একজন শিক্ষকই পারেন তা শিক্ষার্থীদের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করতে যেখানে তারা নির্দ্বিধায় পড়াশোনা করতে পাড়বে। নতুন নতুন কিছু শিখতে পারবে। আগে শোনা যেতো শিক্ষকরা ছাতা দিয়ে পেটাতো। এখানে শিক্ষকরা ইচ্ছা করে এটা করতো এমনটি নয়। তারা ওই শিক্ষার্থীকে পথে আনার চেষ্টা করতো। কোন একজন শিক্ষার্থী কয়েকদিন না এলে তারা বাড়ি পর্যন্ত চলে যেতেন। জানতে যে কি হয়েছে। এখানে থেকেই ত তৈরি হতো ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক। বেত্রাঘাত যুগ কষ্টের হলেও এখনও সবাই মনে করে মুচকি হাসিতে ঠোট বাকা হয়। সকল শিক্ষকেই আবার নতুন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ভাবে পরিবেশকে তৈরি করতে হবে, না হলে আর কিছুদিনের মধ্যে আমাদের দেশে তৈরি হবে একটা সার্টিফিকেট ধারী মুর্খ জাতিতে।