নড়াইলে ৫৫ মণ টাইগারের সাথে পালসার ফ্রি

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল: নড়াইলের ৫৫ মণের টাইগারের সঙ্গে পালসার ফ্রি কোরবানির ঈদ এলেই দেখা মেলে বাহারি নাম ও বিশাল আকৃতির গরুর। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। সাদা কালো রঙের শান্ত প্রকৃতির গরুর নাম রাখা হয়েছে নড়াইলের টাইগার। গরুটি যিনি কিনবেন তিনি উপহার হিসেবে পাবেন একটি পালসার মোটরসাইকেল।নড়াইলের টাইগার আসন্ন কোরবানির জন্য প্রস্তুত। গরুটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার মালিক সেলিম মোল্যা (২৪)। সেলিম জেলার লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের রবিউল মোল্যার ছেলে।

গরুটি দেখতে আসা অবসারপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মিশানুর গাজী বলেন, আমি এর আগে এতো বড় ষাঁড় গরু দেখেনি। লোকমুখে শুনেছি তাই ষাঁড়টিকে দেখতে আসমলাম। অনেক ভালো লাগলো। তবে বুঝতে পেরেছি খামারি অনেক কষ্ট করে ষাঁড়টিকে এতো বড় করেছে।

আরেক দর্শনার্থী নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাহিদ ঢাকা মেইলকে বলেন, নড়াইলের টাইগার বিশাল আকারের হাতির মতো বড় দেখতে। আমার খুব ভালো লেগেছে দেখে।

মিরাজুল ইসলাম নামে একজন বলেন, সেলিম আমার পরিচয়ে ভাগ্নে হয়। তার বাড়িতে বড় একটি ষাঁড় গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করছে। আমি প্রায় তার বাড়িতে ষাঁড় গরুটি দেখতে আসি। ষাঁড়টি বেশ বড়। আমি মাঝে মধ্যে তাকে গরুটি লালন পালনে সহায়তা করি।গরুর মালিক সেলিম মোল্যার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, নড়াইলের টাইগার গরুটি হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের। তার বয়স ৪ বছর। দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ১২ ফুট, উচ্চতা ৬ ফুট, ওজন প্রায় ৫৫ মণ। আসন্ন কোরবানির ঈদে তাকে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

ক্ষতিকর ও মোটাতাজাকরণের কোনো প্রকার ওষুধ প্রয়োগ ছাড়াই দেশীয় প্রাকৃতিক খাবার বিচালি, ঘাস, খৈল, ভুষি, খুদের ভাত, কুড়া ইত্যাদি খাবার খাইয়ে বড় করা হয়েছে গরুটিকে। অতি আদর যত্নে লালন পালন করেছি। তার প্রতি অনেক মায়াও তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার টাকা খাবারের পেছনে খরচ হয়। বাড়িতে রেখেই তাকে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তাকে বিক্রি করতে হবে এ কথা ভেবেই চোখে জল চলে আসছে।

গরুটির মালিকের দাবি এই এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বড় গরু। বিশাল দেহের অধিকারী হওয়ায় প্রতিদিন দেখতে অনেকেই ভিড় করছেন। মাঝে মধ্যে গরু ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা আসছেন গরুটি কিনতে। মালিক গরুটির দাম হাঁকিয়েছেন ২০ লাখ টাকা। কাঙ্খিত দাম পেলেই বিক্রি করতে চান। গরুটি যিনি কিনবেন উপহার হিসেবে তাকে একটি পালসার মোটরসাইকেল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মালিক সেলিম মোল্যা।
নড়াইলের টাইগারের মালিক সেলিম মোল্যার মা সেলিনা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, গরুটি ৪ বছর আমরা লালল পালন করছি। কোরবানির সময় প্রায় চলে আসছে। সঠিক দাম পেলে আমরা গরুটি বিক্রি করব।

এ বিষয়ে লোহাগড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. লেলিন প্রধান বলেন, লোহাগড়া প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে খামারিদের বিভিন্ন ধারনের পারমর্শ ও সহোযোগিতা করা হচ্ছে। কোরবানির পশুর চাহিদার চেয়ে উপজেলায় বেশি পশু রয়েছে। আশা করছি এবার ঈদুল আযাহায় খামারিরা গরুর ভালো দাম পাবেন।

উল্লেখ্য, নড়াইল প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু মজুদ আছে ৫৪ হাজার ৪৯০টি। কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৩২ হাজার ১৪৫টি। অর্থাৎ ২২ হাজার ৭৭৫টি গবাদি পশু উদ্বৃত রয়েছে।

এবারের কোরবানিতে নড়াইল জেলায় ৩টি উপজেলা নড়াইল সদর, লোহাগড়া ও কালিয়ায় ৪ হাজার ৫৯৯টি খামারে কৃষকের মজুদ থাকা গবাদি পশুর মধ্যে ষাঁড় রয়েছে ১২ হাজার ৯৫৮টি, বলদ ২ হাজার ৫৭১টি এবং গাভী রয়েছে ৪ হাজার ১৬৯টি। মোট গরুর সংখ্যা ১৯ হাজার ৬৯৮টি। এছাড়া ছাগল এবং ভেড়া রয়েছে ৩৫ হাজার ১৯২টি। যার মধ্যে ছাগল ৩৫ হাজার ১০৩টি এবং ৮৯টি ভেড়া রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares
Verified by MonsterInsights