দোয়া কবুল না হওয়ার কারণ
সকালের ডাক ডেস্ক
কোনো কোনো সময় দোয়া কবুল হয় না। কেননা দোয়াকারী এমন কিছু চান যা তার জন্যে আদৌ কল্যাণকর নয়। অনেক সময় দোয়াকারী নিজেই অনুধাবন করেন যে, তিনি দোয়ার মাধ্যমে যা প্রার্থনা করেছিলেন তা ভুল ছিল। ‘যেমন: কোনো অসুস্থ ব্যক্তি অথবা ছোট শিশু এমন কোনো খাদ্যের আবেদন করে যা তার জন্যে ক্ষতিকর, অথচ সে তা বোঝে না।’ সুতরাং এমন অবস্থায় আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন না। নিম্নে দোয়া কবুল না হওয়ার কিছু কারণ উল্লেখ করা হল:
১ হারাম অর্থ দ্বারা জীবনধারণ করা ,
যেমন চুরি, ডাকাতি, সুদ,ঘোষ, ওজনে কম, ও দূনীতি, চাঁদা বাজি , ফেরকাবজি , পরের হক্ব নষ্ট , অংশীদারদের বঞ্চিত করন , কুফরী শীরকী ও বেদআতী কর্মকান্ডের মাধ্যমে উপার্জীত রোজগার আবশ্যই হারাম , এ রকম উপার্জীত টাকা দিয়ে কেনা খাদ্য দ্রব্য কাপড- চোপড ইত্যদি পরে হাজারো নামাজ, রোজা, হজ্ব, জাকাত, তাবলীগি ইজতেমায় গিয়ে দোয়া করলে ঐ দোয়া আল্লাহ কখনো কবুল করবেন না ৷ দোয়া একপ্রকার এবাদত। এবাদত ক বুল হওয়ার শর্ত হচ্ছে হারাম থেকে দূরে থাকা। অনুরূপভাবে দোয়া কবুলের জন্যেও শর্ত হচ্ছে হারাম ভক্ষণ না করা।
আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসিতে বলেন: তোমার দায়িত্ব হলো দোয়া করা। আর আমার দায়িত্ব হলো কবুল করা। হারাম ভক্ষণকারীর দোয়া ব্যতীত অন্য কোনো দোয়াই পর্দার আড়ালে থাকে না।২- আল্লাহর নির্ধারিত নিয়ম-কানুনের বাইরে চাওয়া ,
দোয়ার মাধ্যমে এমন কিছু চাওয়া ঠিক নয় যা আল্লাহর নির্ধারিত নিয়মের বহির্ভূত। ‘যেমন, গাছ রোপণ না করেই ফলের জন্যে দোয়া করা। বিবাহ না করে সন্তানের দোয়া করা ‘ এ ধরনের দোয়া প্রাকৃতিক নিয়মের বহির্ভূত। কাজেই তা কবুল হওয়ার আশা রাখা আদৌ যুক্তিসংগত নয়।
৩- নিষ্ঠুরতা ও নির্দয়তা
কঠোর, নির্মম, নির্দয় ও নিষ্ঠুরদের দোয়া আল্লাহর নিকট কবুল হয় না। এ প্রকৃতির মানুষ অহংকারী হয়ে থাকে। ইখলাসের সহিত আল্লাহকে ডাকে না। নির্দয় মানুষের মনকে আল্লাহ তাআলা পাথর কিংবা তার চেয়েও শক্ত বলে ঘোষণা করেছেন:
ثُمَّ قَسَتْ قُلُوبُكُمْ مِنْ بَعْدِ ذلِكَ فَهِيَ كَالْحِجارَةِ أَوْ أَشَدُّ قَسْوَةً وَ إِنَّ مِنَ الْحِجارَةِ لَما يَتَفَجَّرُ مِنْهُ الْأَنْهارُ وَ إِنَّ مِنْها لَما يَشَّقَّقُ فَيَخْرُجُ مِنْهُ الْماءُ وَ إِنَّ مِنْها لَما يَهْبِطُ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَ مَا اللَّهُ بِغافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُون
এর (ঘটনার) পরও তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেল, তা পাথর অথবা তদপেক্ষা কঠিন! পাথরের মধ্যে কতক এমনও আছে যা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয়। আর কতক এমনও আছে যা বিদীর্ণ হওয়ার পর তা থেকে পানি নির্গত হয়। আবার কতক এমনও আছে যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে! আর আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে বেখবর নন। (সুরা: আল্ বাকারা, ৭৪।)
৪ দোয়া কবুলে কল্যাণ না থাকা ,
যেসব দোয়ায় বান্দার কল্যাণ থাকেনা সেসব দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না। আল্লাহ তাআলা তাঁর মনোনীত ও অমনোনীত উভয় বান্দাদের পার্থিব কল্যাণ দান করেন। কিন্তু আখেরাতের কল্যাণ শুধুমাত্র মনোনীত বান্দাদের দান করেন। মোমিন ব্যক্তি স্বীয় অজান্তে পার্থিব জীবনে এমন কিছু চেয়ে থাকেন যা তার জন্যে অকল্যাণকর। সুতরাং আল্লাহ তাআলা তাকে তা দেন না। অপরপক্ষে পারলৌকিক জীবনের জন্যে যা চান তাই দেন। আর কাফেরদেরকে পার্থিব জীবনে যা চায় তা চাওয়ার পূর্বেই দিয়ে থাকেন, কিন্তু বেহেস্তে তাদেরকে কিছুই দেবেন না। (বিহারুল আনওয়ার, খঃ ৬৯, পৃঃ ৫২)
৫- অন্যের প্রতি অত্যাচার করা
অন্যের হক নষ্ট করা এবং অন্যের প্রতি জুলুম-অত্যাচার করা, দোয়া কবুল না হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। আল্লাহ তাআলা অত্যাচারীদের সাহায্য করেন না।
وَ الظَّالِمُونَ ما لَهُمْ مِنْ وَلِيٍّ وَ لا نَصير
জালিমদের কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই। (সুরা: আশ শুরা, ৮।)
আমিরুল মোমেনিন হজরত আলী রাঃ বলেন: আল্লাহ তাআলা হজরত ইসা(আঃ) প্রতি এমর্মে ওহি নাজিল করেন যে, হে ইসা! বনিইসরাইলকে বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আমার কোনো একটি প্রাণীর প্রতিও জুলুম করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমিও তাদের কোনো দোয়া কবুল করব না!” (এদ্দাতুদ্ দায়ি, অধ্যায়, ৩।)
৬- গোনাহে লিপ্ত হওয়া
আল্লাহর নিকট বান্দা এমন কিছু চেয়ে দোয়া করে যে, যদি তাকে সেটা দেওয়া হয় তাহলে পরবর্তীতে সে উক্ত বস্তুর মাধ্যমে গোনাহে লিপ্ত হবে। এ কারণে আল্লাহ তাআলা ফেরেস্তাদের বলেন: ‘তার চাহিদা পূরণ করো না! কেননা সে গুনাহের দিকে অগ্রসর হবে।’ এ কারণে আমার পক্ষ থেকে দোয়া গ্রহণ হতে বঞ্চিত করা হয়েছে। (বিহারুল আনওয়ার, খঃ ৬৯, পৃঃ ৫২।)
তাছাডা, একদিন ইব্রাহিম ইবনে আদহাম (মৃত্য: ১৬২ হিজরী) (রাহিমাহুল্লাহ) বসরা শহরের একটি বাজারের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকজন তার পাশে সমবেত হয়ে জিজ্ঞাস করল: হে আবু ইসহাক ! আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা কুরআনে বলেন: “আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব” কিন্তু আমরা অনেক প্রার্থনা করার পরও আমাদের দোয়া কবুল হচ্ছেনা। সে (ইব্রাহিম) বললেন, “ওহে বসরার অধিবাসী, দশটি ব্যাপারে তোমাদের অন্তর মরে গেছে”।
প্রথম: তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে অবগত কিন্তু তার প্রদত্ত কর্তব্যসমূহ পালন কর না;
দ্বিতীয়: তোমরা কুরআন পড় কিন্তু সে অনুযায়ী আমল কর না;
তৃতীয়: তোমরা দাবী কর যে রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভালবাস কিন্তু তার সুন্নাহকে পরিত্যাগ কর;
চতুর্থ: তোমরা নিজেদেরকে শয়তানের শত্রু হিসাবে দাবী কর কিন্তু তোমরা তার পদাংক অনুসরন কর;
পঞ্চম: তোমার জান্নাতে যেতে উদগ্রীব কিন্তু তার জন্য পরিশ্রম কর না;
ষষ্ঠ: তোমরা জাহান্নামের ভয়ে আতঙ্কিত কিন্তু পাপের ম্যাধমে প্রতিনিয়ত তার নিকটবর্তী হচ্ছ;
সপ্তম: তোমরা স্বীকার কর মৃত্য অনিবার্য কিন্তু তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত কর না;
অষ্টম: তোমরা সর্বদা অন্যর দোষ বের করতে সচেষ্ট কিন্তু নিজের দোষ-ত্রুটির ব্যাপারে উদাসীন;
নবম: তোমারা আল্লাহ’র অনুগ্রহ উপভোগ কর কিন্তু তার জন্য শুকরিয়া আদায় কর না;
দ্বাদশ: তোমরা মৃতদেহ’র দাফন সম্পন্ন করার পর তার থেকে শিক্ষা গ্রহন কর না।