তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইবিতে দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ১০

ওয়াসিফ আল আবরার, ইবি প্রতিনিধি: তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষ। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাস জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির জেড়ে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়ান অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। পরে হাতাহাতি রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে।

প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়, ক্রিকেট ও ফুটবল ম্যাচ চলাকালে মাঠের ভেতরে ক্রিকেট ফিল্ডার দাড়ানোকে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন কয়েকজন শিক্ষার্থী। ঘটনার জেড়ে পরবর্তীতে কথা-কাটাকাটি রুপ নেয় দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। এসময় ক্রিকেটারদের খেলার ব্যাট, স্ট্যাম্প ও বাশ নিয়ে মারামারিতে জড়ান উভয়পক্ষের খেলোয়াড়েরা। এরপর ঘটনাস্থলেই এক শিক্ষার্থীর মাথা ফাটা, একজনের চোখে আঘাত পাওয়া এবং অপর একজনের হাত ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও এতে আহত হয় তূর্য, কবির, মেজবাহ, জিয়ন, রিয়াজ, মাফি, আবির, সাদি, ধ্রুব, সাজ্জাদ ও সাকিব নামের কয়েকজন শিক্ষার্থী।

ঘটনায় মারামারিতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাকি বলেন, তারা মাঠের বাইরে থেকে এসে আমাদের উপর হামলা করেছে। আমাদের বন্ধুদের মারতে শুরু করার পর আমরা ৭-৮ জন গিয়েছিলাম সমস্যা সমাধান করার জন্য। তখন আমাদের পিছন দিক থেকে অতর্কিতভাবে মারা শুরু করে। পরবর্তীতে আমাদের বন্ধুবান্ধব আসছে যখন, ওরা আবারও পরে বাঁশ নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে। আমরা পুরপুরি নিরস্ত্র ছিলাম। ওদের মধ্যে জিয়ন, কবির ছিল তবে অনেক লোক থাকায় সবাইকে দেখতে পাইনি।

অপরদিকে, আহত ফুটবল টিমের সদস্য ও ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কবির বলেন, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন মাঠের অন্য পাশে দুর্জয়(মার্কেটিং ১৯-২০), হাফিজ, রিয়াজ, রিফাতসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেট খেলছিল। তাদের প্লেয়ার রাখাকে নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাফিজ স্ট্যাম্প নিয়ে আমাকে মারতে তেড়ে আসায় দুপক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয় এবং দুর্জয়ের নাকে আঘাত লাগে। কিছুক্ষণ পরে তারা আবারও তাদের হলের বন্ধুবান্ধবের সাথে স্ট্যাম্প ও লাঠি নিয়ে আমাদের টিমের গোলকিপার বিজনকে বেধড়ক মারধর করে। তখনি দুপক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়ে যায়। এতে আমি, মেজবাহ, জিয়ন, বিজন সহ আমার সাথে থাকা বেশ কয়েকজন সহপাঠী আহত হই।

ক্যাম্পাসের মেডিকেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. খুরশিদা জাহান জানান, চিকিৎসা নিতে আসা ৫ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। এদের মধ্যে চোখে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত একজনকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি ৪ জনের মধ্যে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত ২ জন এবং বুকে, পিঠে আঘাতপ্রাপ্ত ২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হলে পাঠানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে আমরা মনে করছি যে এটি কোন রাজনৈতিক বা হল কেন্দ্রিক বা উস্কানিমূলক কোন ঘটনা নয়, নিতান্তই খেলাধুলা কে কেন্দ্র করে ঘটা বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগের দিনে শিক্ষার্থীরা এমন আচরণে আমরা খুবই মর্মাহত। তাদের উচিত ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু না করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসব উদযাপন করা। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা যেকোন পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত আছি। যদি লিখিত কোন অভিযোগ পাই তবে আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares
Verified by MonsterInsights