ডব্লিউসিএস’র স্বেচ্ছাসেবক তাজুলের গল্প
জুবায়ের আহমেদ, বার্তা সম্পাদক
সেদিন টেলিভিশনে সংবাদ দেখলাম, করোনা সন্দেহে গর্ভধারিণী মাকে জঙ্গলে ফেলে আসে নাড়ীছেড়া ধন সন্তানেরা! অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য ঘটনা!
এটি একটি উদাহরণ মাত্র। এরকম অবিশ্বাস্য, অমানবিক, অপ্রত্যাশিত ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায়। স্বার্থপর ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থায় কে আপন, কে পর? বোঝা মুশকিল। রক্তের সম্পর্কও বেঈমানি করে স্বার্থের কারণে। সুদিনে যে পাশে থাকে দুঃর্দিনে হয়ত সেই আপনাকে চিনবে না। অবজ্ঞা, অবহেলা ও বিশ্বাসঘাতকতা মানব চরিত্রের চরম বিপরীত বাস্তবতা।
করোনার ভয়াবহ পরিসংখ্যান দেখে যতোটা না বিচলিত হই ত্রাণ চুরির পরিসংখ্যান দেখে তার বেশি বিচলিত হই। কাম্যহীন এই চিত্র হয়ত বিচিত্র নয়, কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় খুবই অমানবিক, অসামাজিক, অবিবেচ্য। মানবিকতা ও সামাজিকতা প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন মানসিক পরিবর্তন।
নিঃস্বার্থ-নিবেদিত মানসিকতাই পারে সাম্য-সম্প্রীতির সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। এরূপ আদর্শিক সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে এসেছে আমাদের দেশের অসংখ্য যুব সমাজ ও সামাজিক সংগঠন। ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি তাদের মধ্যে অন্যতম। আজ বলব, ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটির এক নিবেদিত তরুণ স্বেচ্ছাসেবকের গল্প।
করোনা ঝুঁকি ও প্রতিকূল পরিবেশেও এই তরুণ এগিয়ে এসেছেন মানবিক মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত হয়ে। করোনা থেকে বাঁচতে ও বাঁচাতে যে সকল লড়াকুরা সম্মুখে দাঁড়িয়ে বিরত্বের সাথে লড়াই করছেন। ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, সাংবাদিক ও ভলান্টিয়ারগণ তাদের মধ্যে অন্যতম। করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এখন চিকিৎসা বিভাগের নিরাপত্তা।
এই বিভাগের সুরক্ষা নিশ্চিতে ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি অনন্য ভূমিকা রাখছে। চিকিৎসক ও নার্সদের নিরাপত্তা বিধানে পৌঁছে দিচ্ছে সুরক্ষা সামগ্রি (পিপিই, হেড শিল্ড, হ্যান্ড গ্লোভস, মাস্ক) ও বিশুদ্ধ পানি। করোনা সংক্রমণে ঢাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ শহর। প্রতিনিয়তই বাড়ছে সংক্রমণের হার। এমন পরিস্থিতিতে আমরা যখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করছি।
তখন ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক সৈয়দ তাজুল ইসলাম মানুষের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন ত্রাণ সামগ্রি। ডাক্তার-নার্সদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন সুরক্ষা সামগ্রী। কথায় বলে – চাচা আপন প্রাণ বাঁচা! আসলে কি সবাই আপন প্রাণের কথা ভাবে? না, কেউ কেউ আজও মানবতার কথা ভাবে।
স্বেচ্ছাসেবক সৈয়দ তাজুল তাদেরই একজন। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও কেন এমন কাজের সাথে সম্পৃক্ত হলেন? জানালেন – মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের জন্ম হয়নি তাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। আজ জাতিয় দুর্যোগে সামান্য ভূমিকা রাখতে পেরে কিছুটা আত্মতৃপ্ত। এই একটি উক্তিই প্রমাণ করে- এদেশের যুব সমাজ দেশকে ভালোবাসে, দেশের মানুষকে ভালোবাসে। সবাই স্বার্থপর হয়না, সবাই দায়িত্বহীন হয়না।
করোনা চলে যাবে, রেখে যাবে পরিবর্তন। মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হবে, মানবিকতা সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। ধন্যবাদ জানাই, ওয়ার্ল্ড ক্যাসার সোসাইটির সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরকে। যিনি সৈয়দ তাজুল ইসলামের মতো দেশপ্রেমিকদের দেশের প্রয়োজনে, দশের কল্যাণে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দিয়েছেন।