টেকসই হচ্ছে না উপকূলীয় বাঁধ!
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: কিছুতেই যেন টেকসই হচ্ছে না উপকূলীয় বাঁধ। গত দু সপ্তাহের ব্যবধানে একই এলাকার দুটি বাঁধ ধসে যাওয়ায় এমন মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা বলছেন, আবারও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের চুনা নদীর বেড়িবাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। এতে বেড়িবাঁধের উপর নির্মিত ইটের সোলিংয়ের রাস্তার মাঝ বরাবর বৃহদাকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) দুপুরে উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের কলবাড়ি বাজারে পাশে এই ধস নামে।
স্থানীয়রা জানান, অতিরিক্ত জোয়ারের চাপে দুপুরের দিকে চুনা নদীর বাঁধে মাঝ বরাবর ধস নামে। এতে বেশ কিছু জায়গাজুড়ে দেবে গেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেবে যাওয়া বাঁধ সংস্কার করা না হলে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে গোটা এলাকা।
স্থানীয়রা আরও জানান, চুনা নদীর যে স্থানে ফাঁটল দেখা দিয়েছে সেখানে আগে থেকে ঘেরে পানি তোলার জন্য একটি মিনি স্লুইস গেট ছিল। বিষয়টি পাউবো কর্মকর্তাদের অবগত করলে গেটটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু অসাধু ঘের ব্যবসায়ীরা রাতের আধারে সেখান থেকে পুনারায় পানি তোলার জন্য পাইপ বসায়। এতে অতিরিক্ত জোয়ারের চাপে দেবে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জিএম রুস্তুম আলি বলেন, দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ দেখি ফাঁটল দেখা যাচ্ছে। অনেকটা জায়গাজুড়ে দেবে গেছে। যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে আমরা ভেসে যাবো।
সোহাগ হোসেন বলেন, যে ভাঙন দেখা দিয়েছে, তাতে বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। আর তা হলে ঘরবাড়ি, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে যাবে।
শ্যামনগরের দায়িত্বে থাকা পাউবোর এসডিও মো. জাকির হোসেন বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়েছি।
এদিকে সংস্কারের ছয় মাস না যেতে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালীতে সদ্য সংস্কার করা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের একাংশ ধসে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন আগে ফাটল দেখা দেওয়ার পর মহসীন সাহেবের হুলো নামীয় অংশের ১৮-২০ ফুটের বেশি জায়গা গত ২৩ জুন নদীতে বিলীন হয়ে যায়। মাত্র পাঁচ মাস আগে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে মেরামতকৃত অংশের বাঁধ পুনরায় ধসে যাওয়ার ঘটনায় এলাকাজুড়ে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ধসে যাওয়া অংশের মাটিসহ উপরিভাগের জিও ব্যাগ নদীতে বিলীন হওয়ায় চলতি বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ ভাঙনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মূল ঠিকাদারের পরিবর্তে শ্রমিক সরদার দিয়ে কাজ সম্পাদনের কারণে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সেখানে দ্বিতীয়বার ধসের ঘটনা ঘটেছে। ধসে যাওয়া অংশের বাঁধ দ্রুততম সময়ে মেরামত করতে না পারলে ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, কাজ হস্তান্তরের পর তার কোনো দায় নেই বলে ঠিকাদার দাবি করলেও পাউবো কর্তৃপক্ষ ধসের বিস্তৃতি ঠেকাতে জিও শিট বিছিয়ে দেওয়া হবে বলে জানায়।
দাতিনাখালী এলাকার আবু মুছা জানান, পাঁচ-ছয় মাস আগে একই অংশের বাঁধে ধসের সৃষ্টি হলে মাটির কাজ করার পর জিও ব্যাগ ফেলা হয়। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে মেরামতের মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে আবারও ধস দেখা দেয়। মূল ঠিকাদারের পরিবর্তে শ্রমিক সর্দার দিয়ে কাজ করানোর ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে একই অংশে দ্বিতীয়বার ধসের সৃষ্টি হয়।
বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম জানান, সিত্রাংয়ের পর থেকে ‘মহসীন সাহেবের হুলো’ এলাকায় ফাটল দেখা দেয়। পরবর্তীতে বারবার বলা হলেও ঠিকাদার বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তরফে তদারকি না থাকায় হঠাৎ বাঁধের বাইরের কিছু অংশ নদীতে ধসে যায়।
বাঁধে ধস নামার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশের কাজ সম্পন্ন করা সহ-ঠিকাদার ও শ্রমিক সরদার আইয়ুব হোসেন জানান, কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পর তার কোনো দায় নেই। বাঁধের কোনো নিশ্চয়তা নেই- উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, একদিন কাজ করে পরের দিনও তা নদীতে বিলীন হলে ঠিকাদারের কী করার থাকে। এসময় কাজের গুণগতমান রক্ষা করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন জবাব দেননি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সংশ্লিষ্ট অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেকশন অফিসার জাকারিয়া ও সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
তবে অপর সেকশন অফিসার মাসুদ রানা জানান, ধসে যাওয়া অংশের ভেতর দিয়ে পৃথক বাঁধ থাকায় ভয়ের কিছু নেই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধসে যাওয়া অংশে জিও শিট বিছিয়ে ধসের ব্যাপকতা ঠেকানো হবে।