জয়পুরহাটের লতিরাজ এখন বিদেশে
এম.এ.জলিল রানা,জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের কচুর লতি এখন দেশের গুন্ডী পেরিয়ে পৌঁছে গেছে সু-দুর বিদেশে। লতিরাজ নামে খ্যাত এই লতি-কচু’ জেলার পাঁচবিবি উপজেলার কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়ে-খুলেদিয়েছে নতুন সম্বাবনার দ্বার।
এখানকার লতি এখন দেশের গুন্ডী-পেরিয়ে বীদেশেও রফতানী হচ্ছে। অন্যান্য সবজী চাষের চেয়ে কম খরচে বেশি লাভ-জনক হওয়ায় প্রতি বছরই বেড়েই চলেছে এ সবজীর চাষবাদ।
এখাকার কচুর লতি গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মান, ডেনমার্ক, সুইডেন ও মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রায় ২৫টি দেশে রফতানি হয়ে আসছে। ফলে এই লাভ-জনক ফসল থেকে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন হচ্ছে, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।পাশা-পাশী স্বল্প সময়ে কচুর লতি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ২ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে পানি কচুর লতি চাষাবাদ হয়েছে। যা গত অর্থ বছর হতে ১১০ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে শুধু পাঁচবিবি উপজেলাতেই ১ হাজার ৯শ’ হেক্টর জমিতেই চাষ হয়েছে এ লতি ।আর লতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার মে:টন।
প্রতি বিঘা জমিতে হাল চাষ, শ্রম, সেচ, গোবর, ড্যাপ, পটাশ, জিপসাম ও ইউরিয়া বাবদ ১২-১৫ হাজার টাকা খরচ করে লতি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ৩-৪ হাজার কেজি লতি পেয়ে থাকে কৃষকরা।
সরেজমিন কেশবপুর, পশ্চিম বালিঘাটা, সুইচগেট পাড়া, ধরঞ্জীসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাটা বকুরার গরীব চাষি মৃত. অমির উদ্দীন-ই-প্রথম এই লতি চাস শুরু করেন ।শুরুতে দুই-একজন কৃষকের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে তা দ্রুতগতিতে বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অত্যন্ত সু-স্বাদু ও পুষ্টিমান সম্পন্ন হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় পাঁচবিবি উপজেলার এ কচুর লতি এখন জয়পুরহাট সদর, দিনাজপুরের বিরামপুর, নওগাঁর বদলগাঁছী, যশোর জেলাসহ অন্যান্য দু-একটি জেলা-উপজেলাতে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। উপজেলার আয়মা রসুলপুর ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের সফল লতি চাষী মনোয়ার হোসেনসহ একাধিক কৃষক জানান, এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ মাস এর পুরো মৌসুম হলেও সারা বছরই এর ফলন পাওয়া যায়।লতির পাইকার সাগর ও সোবহান বলেন, পাঁচবিবির বটতলীতে এ লতির বাজার থেকে সিজন টাইমে প্রতিদিন ৬০-৭০ টন লতি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন তারা। বর্তমান কৃষকদের কাছ থেকে প্রকারভেদে প্রতি কেজি লতি ১০-৩৫ টাকা দরে রতি কেনছে পাইররা।উৎপাদিত কচুর লতির প্রধান পাইকারী বাজার ঢাকার কারওয়ান বাজার।
এছাড়াও যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, বাইপাইল, টাঙ্গাইল, দৌলতপুর, রাজশাহী, নাটোর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, বোদা, দিনাজপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জেও যাচ্ছে এখানকার।লতি।জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এজেড এম সাব্বির ইবনে জাহান বলেন, রফতানিযোগ্য কচুর লতি চাষে কৃষকদের সবরকম সহযোগিতা করে যাচ্ছি এবং জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে কচুর লতির জন্য রফতানি প্রক্রিয়া জোন করার একটি প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।
এখানকার উৎপাদিত কচুর লতি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি হলেও কৃষি বিভাগের পরামর্শ ছাড়া সরকারের নেই কোনো পৃষ্ঠপোষকতা, নেই লতি বিক্রির স্থায়ী কোনো হাট-বাজার। এখানে অস্থায়ী একটি বাজার গড়ে উঠলেও তা পাইকারদের হাতে জিম্মি থাকায় কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছে নায্য মূল্য থেকে। এ সমস্যার আশু সমাধানের দাবি জানিয়েছে লতি চাষিরা।