জুমু’আর দিনের ফযীলত

সকালের ডাক

জুমু’আর দিনের ফযীলত

১।হাদীসঃ মোসলেম শরীপে আছে রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেনঃ সপ্তাহের দিনসমূহের মধ্যে জুমু’আর দিনই সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। এই দিনেই হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হইয়াছিল, এই দিনেই তাঁহাকে বেহেশতে স্থান দান করা হইয়াছিল, এই দিনেই তাঁহাকে বেহেশত হইতে বাহির করিয়া দুনিয়াতে প্রেরণ করা হইয়াছিল এবং এই দিনেই কিয়ামত (হিসাব নিকাশের পর পাপীদের দোযখ নির্বাসন ও মু’মিনগণের বেহেশত গমন) হইবে।

২।হাদীসঃ মসনদে আহমদে আছেজুমু’আর রাত্রের ফযীলত শবেক্বদর অপেক্ষাও অধিক। কারণ, এই রাত্রেই হযরত সরওয়ারে কায়েনাত ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় মাতৃগর্ভে শুভাগমন করিয়াছিলেন এবং হযরতের শুভাগমনের মধ্যেই দুনিয়া ও আখেরাতের অগনিথ ও অশেষ মঙ্গল নিহিত।

৩।হাদীসঃ বোখারী শরীফে আছে, রসূলুল্লাহ ছাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেনঃ ‘জুমু’আর দিনে (সমস্ত দিনের মধ্যে) এমন একটি সময় আছে যে, সেই সময় কোন মু’মিন বন্দা আল্লাহর নিকট যাহা কিছু চাহিবে তাহাই পাইবে।’ এই সময়টি যে কোন সময় তাহা নির্দিষ্ট করিয়া বলা হয় নাই। হাদীসের ব্যাখ্যাকার ইমামগণ ইহা নির্দিষ্ট করিয়া গিয়া অনেক মতভেদ করিয়াছেন। তন্মধ্যে দুইটি মতই বিশেষ উল্লেখযোগ্য। একটি এই যে, সেই সময়টি খুৎবার শুরু হইতে নামাযের মেষ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আছে।

দ্বিতীয় এই যে, সেই সময়টি (আছরের পর) দিনের শেষ ভাগে আছে। এই দ্বিতীয় মতকে ওলামাদের এক বড় দল গ্রহণ করিয়াছেন এবং ইহার সপক্ষে বহু ছহীহ হাদীস রহিয়াছে। শেখ দেহলভী (রঃ) বলেনএই রেওয়ায়তটি ছহীহ, কেননা, হযরত ফাতেমা (রাঃ) জুমু’আর দিন খাদেমকে বলিয়া দিতেন যে, জুমু’আর দিন শেষ হওয়ার সময় আমাকে খবর দিও। হযরত ফাতেমা রাযিয়াল্লাহু আনহা শুক্রবার দিনের শেষ ভাগে আছরের পর সব কাজ ছাড়িয়া আল্লাহর যিকর এবং দো’আয় মশগুল হইতেন।

৪।হাদীসঃ আবূ দাউদ শরীফে আছেরসূলুল্লাহু ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেন, জুমু’আর দিনই সর্বাপেক্ষা অধিক ফযীলতের দিন। এই দিনেই কিয়ামতের জন্য সিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হইবে। তোমরা এই দিনে আমার জন্য বেশী করিয়া দুরূদ শরীফ পড়িও। ঐ দিন তোমরা যখন দুরূদ (বা সালাম) পড় তৎক্ষণাৎ তাহা আমার সামনে পেশ করা হয় (এবং তৎক্ষণাৎ আমি তাহার প্রতি উত্তর ও দো’আ দেই।) ছাহাবায়ে কেরাম আরয করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার সামনে কিরূপে পেশ করা হয় (হইবে)? মৃত্যুর পর তো আপনার হাড় পর্যন্ত থাকিবে না। তখন হযরত (দঃ) বলিলেন, (জানিয়া রাখ যে) আল্লাহ তা’আলা জমিনের জন্য নবীদের শরীর হজম করা হারাম করিয়া রাখিয়াছেন।

৫।হাদীসঃ তিরমীযী শরীফে আছেরসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেনঃ ‘আল্লাহ পাক স্বীয় পবিত্র কালামে শাহেদ [আরবি] শব্দের কসম করিয়াছিলেন। ইহার অর্থজুমু’আর দিন। আল্লাহর নিকট জুমু’আর দিন অপেক্ষা ভাল দিন আর নাই। এই দিনে এমন একটি সময় আছে, সেই সময়ে যে কোন মু’মিন বন্দা আল্লাহর নিকট যে কোন দো’আ করিবে, আল্লাহ তা’আলা কবূল করিবেন এবং যে কোন বিপদ (মুছীবৎ) হইতে রক্ষা পাইবার জন্য আল্লাহর নিকট কাঁদাকাটি করিবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তাহাকে সেই বিপদ হইতে রক্ষা করিবেন।’

[আরবি] শব্দ সূরায়ে-বুরূজে আছে, আল্লাহ তা’আলা ঐ দিনের কসম খাইয়াছেন। [আরবি] অর্থাৎ, বুরূজ বিশিষ্ট আসমানের কসম, প্রতিশ্রুতি ও কিয়ামতের দিনের কসম, শাহেদ (জুমু’আ) এর কসম, মাশহুদ (আরাফাত) এর কসম।

৬।হাদীসঃ রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেনঃ ‘আল্লাহর নিকট ঈদুল ফেৎর এবং ঈদুল আযহা অপেক্ষাও জুমু’আর দিন অধিক মর্যাদাশীল (এবং এই দিনই সমস্ত দিনের সর্দার এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দিন।) ইবনে মাজাহ

৭।হাদীসঃ রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেনঃ ‘যে (মু’মিন) মুসলমান বন্দার মৃত্যু জুমু’আর দিনে বা জুমু’আর রাত্রে হয়, আল্লাহ পাক তাহাকে গোর-আযাব হইতে বাঁচাইয়া রাখেন।’ তিরমিযী

৮।হাদীসঃ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু এক দিন

আয়াতটি তেলাওয়াত করিতেছিলেন। (অর্থাৎ, আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘আজি আমি তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করিয়া দিলাম এবং আমার অনুগ্রহ পূর্ণরূপে তোমাদের দান করিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে ধর্মরূপে মনোনীত করিলাম।’) তখন তাঁহার নিকট একজন ইয়াহুদী বসা ছিল। ইয়াহুদী (আয়াতের মর্ম বুঝিয়া) বলিল (ধর্মের পূর্ণাঙ্গ ও সত্য হওয়া সম্বন্ধে এবং আল্লাহর এত বড় অনুগ্রহ প্রাপ্তি সম্বন্ধে) এমন (স্পষ্ট বাণীর) আয়াত যদি আমাদের ভাগ্যে জুটিত, তবে আমরা এমন আয়াত নাযিল হওয়ার দিনকে চিরতরে ঈদের দিন ধার্য করিয়া লইতাম।’

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) উত্তর করিলেনঃ স্বয়ং আল্লাহ তা’আলাই এই আয়াত নাযিল হওয়ার দিনকে ঈদের দিন ধার্য করিয়াছেন অর্থাৎ, সেদিন জুমু’আ এবং আরাফাতের দিন ছিল; আমরা নিজেরা ঈদ বানাইবার প্রয়োজন নাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares