জাপানে ৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন ওয়ারেন বাফেট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জাপানের পাঁচটি বৃহৎ ট্রেডিং হাউজ ও কনগ্লোমারেটে ৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন ওয়ারেন বাফেট। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিনিয়োগে বৈচিত্র্য নিয়ে আসার প্রক্রিয়ায় এই বিনিয়োগে যাচ্ছেন শীর্ষ এ ধনী আমেরিকান। জাপানে যেসব খাতে বিনিয়োগে যাচ্ছেন, তার মধ্যে রয়েছে খাদ্য, বস্ত্র থেকে শুরু করে প্রযুক্তি ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাত। খবর গার্ডিয়ান।

৯০ বছরে পা দেয়া মার্কিন এ ধনকুবের এখন থেকে যেসব জাপানি কোম্পানির বৃহৎ বিনিয়োগকারীদের একজন হতে যাচ্ছেন, সে কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে মিত্সুবিশি করপোরেশন, মিত্সুই অ্যান্ড কোম্পানি, আইতচু করপোরেশন, সুমিতমো করপোরেশন ও মারুবেনি করপোরেশন।

জাপানের প্রায় প্রতিটি ট্রেডিং কোম্পানি বা সগো শশার ৫ শতাংশ শেয়ার ক্রয় করেছে বাফেটের বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে। ওই জাপানি কোম্পানিগুলো জাপানের অর্থনীতিতে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বৈশ্বিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে।

বাফেট বলেন, পাঁচটি প্রধান ট্রেডিং কোম্পানি বিশ্বব্যাপী অনেক জয়েন্ট ভেঞ্চারে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে এমন আরো যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে আমাদের উভয় পক্ষেরই পারস্পরিক সুবিধা নিয়ে আসবে এ উদ্যোগগুলো।

বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনডেমনিটির মাধ্যমে জাপানি ট্রেডিং কোম্পানিগুলোয় ৬৩০ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে পাঁচটি ট্রেডিং কোম্পানির যেকোনো এক বা একাধিক কোম্পানিতে বিনিয়োগ আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের। মহামারীর প্রভাবে পাঁচ ট্রেডিং হাউজের শেয়ারদর কমেছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ।

বাফেটের বড় আকারের এ বিনিয়োগের ফলে জাপানের বাজারে ইতিবাচক হাওয়া নিয়ে এসেছে। পাঁচটি ট্রেডিং কোম্পানিরই শেয়ারদর ৬ শতাংশ থকে ১৪ শতাংশ বেড়েছে। তবে কিছু বিশ্লেষক এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কারণ ঐতিহাসিকভাবে ট্রেডিং হাউজগুলোয় বিনিয়োগ সাফল্য নিয়ে আসেনি।

মিত্সুবিশি ইউএফজে মরগান স্ট্যানলি সিকিউরিটিজের মুখ্য বিনিয়োগ কৌঁসুলি নরিহিরো ফুজিতো বলেন, ট্রেডিং কোম্পানিগুলোর ভ্যালুয়েশন কমার কারণে সেখানে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন বাফেট। তবে অল্প কয়েকটি কোম্পানি বাদে সব ট্রেডিং কোম্পানিতে বিনিয়োগ অনেকটা বাফেটের সঙ্গে যায় না।

দীর্ঘদিন ধরেই জাপানের অর্থনীতি ধুঁকছে, এমনকি নভেল করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার আগে থেকেই। এজন্য অনেক বিনিয়োগকারী এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে যাচ্ছেন। বাফেট যে জাপানের বাজারের দিকে নজর দিয়েছেন, তা গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যখন ইয়েনের বন্ড ইস্যু করে তার কোম্পানি ৪০০ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছিল। এটা ছিল জাপানের বাইরের কোনো কোম্পানির সর্বোচ্চ।

জাপানের ট্রেডিং কোম্পানিতে বিনিয়োগের ফলে মার্কিন অর্থনীতির ওপর বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমাবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি গত প্রান্তিকে অন্তত ৭৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংকোচনের মধ্য দিয়ে গেছে। বর্তমানে ৯০টি ব্যবসার মালিকানা রয়েছে বার্কশায়ারের এবং আরো কয়েক ডজন কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে। এর বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি, যার মধ্যে রয়েছে আমেরিকান এক্সপ্রেস ও কোকা-কোলা থেকে শুরু করে ব্যাংক অব আমেরিকা। এছাড়া অ্যাপলে রয়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের শেয়ার।

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে অধিকাংশ ব্যবসাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বার্কশায়ারের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানির মধ্যে রয়েছে উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ নির্মাতা কোম্পানি প্রিসিজন কাস্টপার্টস। গত মাসে কোম্পানিটি তাদের ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়, যা বৈশ্বিক কর্মী বহরের প্রায় ৩০ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares