জনবল সংকট , তবুও দ্যুতি ছড়াচ্ছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ

এসএম শহীদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা: জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা বিজ্ঞানে দ্যুতি ছড়াচ্ছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ। ২০১০ সালের ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা আইলা দূর্গত সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক জনসভায় সাতক্ষীরায় মেডিকেল কলেজ স্থাপনের ঘোষণা দিলে ২০১১সালের ৫জানুয়ারি ৫০জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও হল সুপার অধ্যাপক ডাঃ গাজী নাসির উদ্দীন বলেন, শহরের আমতলা মোড়ে তৎকালীন সংসদ সদস্য এমএ জব্বারের মালিকানাধীন একটি একটি কমিউনিটি সেন্টারকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস করে ২০১১-২০১২ সেশনের যাত্রা শুরু হয়। একই বছর শহরতলীর বাকাল এলাকায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার আ ফ ম রুহুল হক-এমপি। এরপর ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে শহরের আমতলা মোড়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস থেকে বাকালে স্থায়ী ক্যাম্পাসে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্বোধন করেন।

তিনি আরও বলেন, কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ব্যাচ থেকে সপ্তম ব্যাচ পর্যন্ত প্রতি ব্যাচে ৫০জন করে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়। অষ্টম ব্যাচ থেকে প্রতি ব্যাচে ৬৫জন করে ভর্তি হয়। ইতোমধ্যে ১২তম ব্যাচের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ শুরুতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। পরবর্তীতে সেটি রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যায়।

সাতক্ষীরা মেডিকেল প্রতিষ্ঠার পর থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে একের পর এক সাফল্য অর্জন করছে শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে এখানে ৩২৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে আবাসিক ৩০০জন এবং অনাবাসিক ২৩জন। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী আফসানা তিশা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২৪টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে প্রথম স্থান পেয়ে নজর কাড়া সাফল্য অর্জন করে। এরপর সম্মিলিত মেধাতালিকায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় ব্যাচ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। এরপর সম্মিলিত মেধাতালিকায় ষষ্ঠ ব্যাচ প্রথম স্থান অধিকার করে।

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় ২০২২ সালের ২৮জুন। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ২৪টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) ফলাফলে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। ৫০জন পরীক্ষার্থী চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪৭জন পরীক্ষার্থী এমবিবিএস পাশ করে। পাশের হার ছিল ৯৪%। ইতোমধ্যে সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের সকল কোর্স সম্পন্ন করেছে।

ডাক্তার গাজী নাসির উদ্দীন বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে রয়েছে ২৪টি ডিপার্টমেন্ট। এর মধ্যে রয়েছে আবার অনেকগুলো শাখা। পোস্ট গ্রাজুয়েশনের জন্য রয়েছে অনুমোদনপ্রাপ্ত ছয়টি বিভাগ। প্রশিক্ষণের জন্য আছে এমএস, এমডি ও এফসিপিএস।

চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাসনীম বিনতে আসাদ ও সৌরভ সরকার বলেন, কলেজটিতে রয়েছে সমৃদ্ধ ও উন্নত লাইব্রেরী। ওয়াইফাই যুক্ত লাইব্রেরীতে রয়েছে ২০হাজারেরও বেশি বই। প্রিন্ট বইয়ের পাশাপাশি এখানে বসে ফ্রি ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে বিভিন্ন বই পড়তে পারে।
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান নাজির শাওন পুষ্প রানি রায় বলেন,সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু রয়েছে প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি। বিশেষভাবে চালু রয়েছে হিস্টো প্যাথলজি ল্যাব। এখানে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, এনাটমি ও ফার্মাকোলজিসহ সকল বিভাগ সুসজ্জিত। করোনা কালীন সময়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য আরটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়। বর্তমানে সেখানে মাইক্রো বায়োলজিক্যাল পরীক্ষা করা হয়।

দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জানান তাহসিন রীশা ও মোঃ আবু রায়হান সরকার বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। সিট রেট মাসিক ৫ টাকা। বিনোদনের জন্য ইনডোর গেমস্ ও আউটডোর গেমস দুটিরই ব্যবস্থা আছে। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সুসজ্জিত টিভি রুম। পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর পরিবেশে ডাইনিং রুম ও গেস্ট রুম রয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সুখেও পানির ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য ক্যাম্পাসে সিসিটিভি সংযুক্ত করা হয়েছে। সমগ্র ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় এখানে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন ৩০জন সশস্ত্র আনসার। রন্ধনশালায় রয়েছেন চারজন কুকসহ অন্যান্য ১২জন কর্মচারী। পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছেন চারজন। খেলাধুলা ও শরীরচর্চার জন্য রয়েছে বিশাল মাঠ। এখানে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার সুযোগ রয়েছে। অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য হল সম্প্রসারণ করা দরকার। অডিটোরিয়াম দরকার। লেকচার গ্যালারি সম্প্রসারণ করা দরকার। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ করা দরকার। শিক্ষার্থীদের আর্থিক লেনদেনের জন্য এখানে একটি মোবাইল ব্যাংকিং বুথ স্থাপন করা অতীব জরুরী।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ রুহুল কুদ্দুস বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সকল পণ্য ই-টেন্ডার এর মাধ্যমে ক্রয় করা হয়। ই-লাইব্রেরি এবং ই-ল্যাব শিক্ষার্থীদের মধ্যে দারুণভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসকে সাজানো হয়েছে নান্দনিক রূপে। এখানে প্রার্থনার জন্য রয়েছে একটি সুন্দর মসজিদ। রয়েছে সাইকেল শেড ও পার্কিং জোন। চিত্ত বিনোদনের জন্য রয়েছে বৃক্ষশোভিত মনোরম লেক। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি ক্যাফেটোরিয়া।

শিক্ষকদের লেকচার গ্যালারি রয়েছে। আছে পরীক্ষার হল ও অডিটরিয়াম। এখানে মাত্র ১২জন স্থায়ী কর্মচারী রয়েছেন। স্থায়ীভাবে কর্মচারী নিয়োগ জরুরী। এছাড়া ২২জন স্বেচ্ছাসেবক ও ৪৫জন আউটসোর্সিং কর্মচারী রয়েছেন। ৮৬টি অনুমোদিত পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৫৬জন। পদ খালি রয়েছে ৩০টি। জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের বাতায়নে দ্যুতি ছড়াচ্ছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ।তিনি আরো বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট চিকিৎসক তৈরি করছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ। স্মার্ট মেডিকেল কলেজ হিসেবে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজকে শতভাগ ডিজিটালাইজড করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares
Verified by MonsterInsights