গরমে গর্ভবতী মায়েদের সমস্যা ও সমাধান
দৈনিক সকালের ডাক
দেশজুড়ে চলছে প্রচণ্ড গরম। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হলেও তাতে গরম কমার জন্য যথেস্ট নয়। এই গরমে গর্ভবতী মায়েদের কার্ডিয়াক আউটপুট বেড়ে যায়। এ অবস্থায় মাঝে মাঝেই ভিজ্যুয়াল ব্ল্যাক আউট হয়। অর্থাৎ মাথা ঘুরে যায়। চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে যায়। কেউ কেউ মাথা ঘুরে পড়েও যান। এ ছাড়া শ্বাসকষ্ট হয়। প্রেগনেন্সির সময়কাল যত বেশি হয়; কষ্ট তত বেশি। সুতরাং গরম যত বাড়তে থাকে তাদের এই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয় কিংবা সমস্যা আরও বাড়তে থাকে।
প্রশ্ন: এর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কী?
• যতটা সম্ভব রোদে বের হওয়া যাবে না। বাড়ির বাইরে যেতে হলে ছাতা ব্যবহার করুন। সঙ্গে পানির বোতল রাখুন। পারলে লবণ-চিনি দেওয়া ঠান্ডা পানি পান করুন এবং বাইরে গেলে সঙ্গে রাখুন। তবে ফ্রিজের খুব ঠান্ডা পানি না খাওয়াই ভালো।
প্রশ্ন: অনেকের ধারণা থাকে প্রেগনেন্সি তে ডাবের পানি খাওয়া ঠিক নয়?
• একেবারেই ভুল ধারণা যত খুশি ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন: গরমকালে নানা ফল পাওয়া যায়, কোন ফল খাওয়া উচিত?
• যে কোনো মৌসুমি ফল খেতে কোনো বাঁধা নেই। তবে রাস্তার কাটা ফল না খাওয়াই ভালো।
প্রশ্ন: আখের রস খাওয়া যেতে পারে?
• স্বাস্থ্যকর উপায়ে রস করা হলে কোনো সমস্যা নেই।
প্রশ্ন: দিনে কী পরিমণ পানি পান করা উচিত?
• সারাদিনে ৩ লিটার পানি যথেষ্ট। সকালে ঘুম থেকে উঠে ১ লিটার, দুপুরে ১ লিটার, সন্ধ্যা ৮ টায় মধ্যে বাকি ১ লিটার। রাতে শুতে যাওয়ার আগে বেশি পানি খেলে ঘুমের অসুবিধা হতে পারে। বেশি পানি খেয়ে, শুয়ে না পড়ে একটু ঘোরাঘুরি করা ভালো।
গরম থেকে বাঁচতে ডাক্তারের পরামর্শ
• রোদ এড়িয়ে চলুন।
• সারাদিনে অন্তত তিন লিটার পানি খান
• হালকা সহজপাচ্য পুষ্টিকর খাবার খান
• টাটকা ফল, ফলের রস, লস্যি, ডাবের পানি প্রতিদিনকার ডায়েটে থাকা চাই
• রেডমিট কম খান
• বারবার স্নান করুন, পরিচ্ছন্ন থাকুন
• সময় পেলেই ঘণ্টা খানেক ঘুমিয়ে িনন
প্রশ্ন: অনেক সময় দেখা যায়, গর্ভবতী মহিলাদের পা ফোলা বা পায়ের পেশিতে টান ধরার সমস্যা হয়। কী করা যেতে পারে?
• ব্লাডপ্রেসার যদি নরমাল থাকে, তাহলে বেশির ভাগ পা ফোলাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে বেশিক্ষণ পা ঝুলিয়ে না রাখলে পা ফোলা কমে যায়। কিন্তু যদি না কমে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। পেশিতে টান ধরা এড়াতে ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্ত থাকতে হবে। এছাড়া প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। কিছু মাল্টিভিটামিন ও মিনারেল (ম্যাগনেসিয়াম) কার্যকর হয়।
প্রশ্ন: গরমকালে প্রসূতির ইউরিন ইনফেকশনের প্রবণতা কি বাড়ে?
• খুবই প্রাসঙ্গিক কথা। অনেকেই ডাক্তারের কাছে যান পেটে ব্যথা ও ইউরিনের জ্বালা নিয়ে। প্রচুর পানি খেতে হবে, প্রয়োজনে ইউরিন কালচার করে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে।
প্রশ্ন: খাওয়া দাওয়া কেমন হবে?
• হালকা এবং সহজে হজম হয় এমন খাবার।
প্রশ্ন: কী খেতে পারেন কী পারেন না?
• ব্রেকফাস্ট—মুড়ি/ রুটি/পাউরুটি/ফল/দুধ/ছানা লাঞ্চ—ভাত-রুটি/ডাল/ সব্জি/ডিম বা মাছ/চিকেন/দই। ডিনার—ভাত-রুটি/সব্জি/মাছ/চিকেন। সব খাবারই অল্প তেলে সহজপাচ্য হিসাবে রান্না করতে হবে। ভাজাপোড়া এবং স্ন্যাকস এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। রেস্তোরাঁর খাবার বা ফাস্টফুড খেয়ে গ্যাস্ট্রাইটিস নিয়ে অনেক মায়েরাই আমার কাছে আসেন।
প্রশ্ন: গরমে অনেক গর্ভবতী নারীই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভোগেন, এর থেকে কী ভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে?
• যাদের আগে থেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, গর্ভাবস্থায় সেটা বেড়ে যায়। প্রচুর পানি, শাক-আনাজ ও সঙ্গে ইসাবগুল খেতে পারেন। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে খাসির মাংস কম খাওয়াই ভালো। রাত্রে না খাওয়াই ভালো।
প্রশ্ন: গরমকালে টকদই, বা আমের টক খাওয়া যেতে পারে?
• প্রেগনেন্সির কোনো পর্যায়েই টক জাতীয় জিনিস খেতে বাধা নেই। তবে যদি সেই নারীর গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা থাকে তাহলে না খাওয়াই ভালো। এছাড়া পরিমাণ মতো খেলে কোনো অসুবিধা নেই।
প্রশ্ন: সিজারিয়ান ডেলিভারি বা যে কোনো অপারেশনের পর টক জাতীয় জিনিস কি খাওয়া যেতে পারে?
• আমরা ছোটবেলা থেকে জানি ‘ভিটামিন সি’ কাটা ঘা দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। সিজারের পর টক দই খাওয়া যাবে না, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। গরমকালে দুপুরে ভাতের সাথে হালকা টকের ডাল, পাতিলেবুর রস, বা টক দই খেলে ভালো।
প্রশ্ন: যারা সন্তানদের বুকের দুধের খাওয়ান তারা কি টক খেতে পারবেন?
• তারাও হালকা সহজপাচ্য পুষ্টিকর খাবার খাবেন। টক খেতেও বাধা নেই। মায়ের খাবার যে বুকের দুধের সাথে বাচ্চার শরীরে যাবে এ ধারণাও ভুল।
প্রশ্ন: যেসব মায়েরা বুকের দুধের খাওয়ান তারা গরমে কী পরিমাণ পানি খাবেন?
• তাদের অবশ্যই বেশি পানি খাওয়া উচিত, কারণ দুধের সাথে অনেকটা পানি দেহ থেকে বেরিয়ে যায়।
প্রশ্ন: এই গরমে সদ্যোজাত শিশুদের মায়ের দুধ ছাড়াও আলাদা করে কি পানি খাওয়ানো উচিত?
• না কখনোই নয়। মায়ের দুধে যে পরিমাণ পানি থাকে, তাই শিশুর জন্য যথেষ্ট। এজন্যই বলে ‘এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং’।
প্রশ্ন: সদ্য মা হয়েছেন এমন অনেক নারীর ঘুমের সমস্যা ভোগেন। অনিদ্রা থেকে মুক্তির উপায় কী?
• এটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। প্রথমত সন্তানের সঙ্গে ঘুমিয়ে নিন। বাচ্চাকে অন্য কারও দায়িত্বে দিয়ে দিনের বেলাও ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে নিন। গর্ভাবস্থার শেষ সময়ে অনেক মা রাতে ঠিকমতো ঘুমোতে পারেন না। তারা মাথার দিকটা উঁচু রেখে বিছানায় শুতে পারেন। বা দিকে কাত হয়ে শুলে ভালো। যেভাবে শুলে আরাম হয় সেভাবেও শোয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন: প্রচণ্ড গরমে বারবার কি স্নান করা যেতে পারে?
• দুই বার তো স্নান করাই যেতে পারে, বাকি সময় মাথা না ভিজিয়ে স্নান করুন। ঘামে ভেজা জামাকাপড় পাল্টে ফেলুন, তাতে শরীরের ত্বকে র্যাশ হওয়ার সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন।
প্রশ্ন: গরমকালে প্রসূতিদের চুলকানি একটি বড় সমস্যা। এর সমাধান কী?
• এটি খুব কমন একটা সমস্যা। প্রেগনেন্সি তে লিভারে চাপ পড়ে হয়। চুলকানির সমস্যার জন্য আলাদা ওষুধ ও আছে। এছাড়া প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে অ্যালোভেরা ভালো কাজ করে। এছাড়া গরম কালের ঘামাচি বা চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত স্নান করুন এবং শরীর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
প্রশ্ন: মা এবং সদ্যোজাত শিশু কি এসির মধ্যে থাকতে পারে?
• মায়েদের ক্ষেত্রে সমস্যা নেই। সদ্যোজাতর ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ২৭° বা ২৮° সেন্টিগ্রেড রাখা যেতে পারে।