করোনা দুর্যোগের মতো ১০টি বছর কাটিয়েছে বিনিয়োগকারীরা
অর্থনীতি ডেস্ক:
করোনার দুর্যোগের মতোই বিগত ১০টি বছর কাটিয়েছে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। ২০১০ সালের ভয়াবহ ধসের পর আর পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ায়নি। প্রতিনিয়ত বাজারে চলেছে পতন। কখনো সরবে, কখনো নিরবে। আর করোনাভাইরাস হচ্ছে শেয়ারবাজারের কফিনে শেষ প্যারেকের মতো। এই দীর্ঘ সময় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ কেউ শুনেনি। তাদের পাশেও ছিল না কেউ।
২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর, যেখানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক ছিল প্রায় ৯ হাজার (৮৯১৮) পয়েন্ট। সেই সূচক ১০ বছর ধরে কমতে কমতে বিগত ৩ মার্চ চার হাজার (৪০০৮) পয়েন্টে এসে ঠেকেছে। ২০১০ সালে যেখানে লেনদেন তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল, বর্তমানে সেখানে লেনদেন হচ্ছে গড়ে ৩শ’ থেকে ৫শ’ কোটি টাকা। বন্ধ হয়ে গেছে লাখ লাখ বিও একাউন্ট। ব্রোকারেজ হাউসগুলো গুনছে লোকসান।
এর মধ্যে দেশ এগিয়েছে সব সূচকেই।সরকার নিয়েছে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের যুগান্তকারী পদক্ষেপ। মেট্রোরেল, পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প আরো কত কিছু। শুধু শেয়ারবাজারেই লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। যেসব বিনিয়োগকারী ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ নিয়ে শেয়ারবাজারে এসেছিলেন ১০ বছর আগে- আজ তাদের একাউন্টে হয়তো এক লাখ টাকাও নেই। তবুও আশায় বসে থাকে ব্রোকারেজ হাউজে, যদি কোন দিন ফিরে আসে তার পুঁজি।
অনেকের সংসার চালানোর টাকা থাকে না। বাচ্চার স্কুলের খরচ দিতে পারে না। পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ালে সব হবে এই আশায় ১০ বছর পার করলো। করোনার বন্ধের পর অনেক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশ প্রতিবেদন-এর সঙ্গে আলাপ করেছেন। তারা বলছেন, আজ হয়তো দেশের মানুষ করোনার কারণে অবরুদ্ধ হয়ে উপলব্ধি করেছে, আয়-রোজগার না থাকলে জীবন কতো দুর্বিষহ হয়ে উঠে। নিরবে অভাব সইত হয়। কারো কাছে হাত পাতা যায় না। অথচ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা ১০ বছর ধরেই আয়-রোজগার থেকে বঞ্চিত। শুধু লোকসান আর লোকসান। এই মানসিক কষ্টে অনেকে মারা গিয়েছে। এমনকি অনেকে আত্মহত্যাও করেছে।
আইসিবি সিকিউরিটিজের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ১০ বছরে কিছুই পায়নি বিনিয়োগকারীরা। সরকার মাঝে মাঝে কিছু প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। কিন্তু সেগুলো ব্যাংক, সিকিউরিটিজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোই ভোগ করেছে। রাইট শেয়ার, বোনাস শেয়ার এবং আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো তুলে নিয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিছুই পায়নি।
বিনিয়োগকারী নেতা মোঃ মহসিন মিয়া বাংলাদেশ প্রতিবেদন-কে বলেন, কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের টাকা যেভাবে লুটপাট করেছে, এর পরিণতি আজকের এই বাজার। বছরের পর বছর বোনাসের নামে কোম্পানিগুলো কাগজ ধরিয়ে দেয় বিনিয়োগকারীদের। প্রতিবছরই কোম্পানির আয় বাড়ে, কিন্তু বিনিয়োগকারীেদর হাতে কাগজ ধড়িয়ে দিয়েই খালাস। যদি সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজার থেকে লুটপাটের উপর একটি তদন্ত করে তাহলেই বেরিয়ে আসবে কেন পুঁজিবাজারের দীর্ঘ পতন।
এদিকে বিনিয়োগকারীদের অনেকেই বলছেন, এই মন্দা সময়েও কোন কোম্পানিকে বিনিয়োগকারীদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো শুধু বিনিয়োগকারীদের অর্থ লোপাট করতে জানে, সহযোগিতা করতে জানে না।
সূত্র: বিডি প্রতিবেদন