করোনাভাইরাস নিয়ে ব্র্যাকের জরিপ
নিউজ ডেস্ক:
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস নিয়ে এখনো পর্যন্ত সরকারের নেয়া পদক্ষেপের প্রতি মানুষের সমর্থন রয়েছে, কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই মনে করে এজন্য সরকার পর্যাপ্ত সহায়তা দিচ্ছে না সাধারণ মানুষকে।
এই সহায়তা বলতে জরিপে অংশ মানুষেরা খাদ্য সাহায্য, নগদ অর্থ সহায়তা, ন্যায্য মূল্যে পণ্য ক্রয়ের সুবিধা, পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা এবং মানুষের মনে বিভ্রান্তি দূরীকরণে সরকারি উদ্যোগকে বুঝে থাকেন।
করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের করা এক জরিপে এ চিত্র দেখা গেছে। জরিপটি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়।
সরকারের পদক্ষেপ
ব্র্যাকের এই জরিপে শহর ও গ্রাম এলাকার মোট ২ হাজার ৬৭৫জন মানুষ নিজেদের মতামত দিয়েছেন। সরকারের নেয়া পদক্ষেপকে যথেষ্ঠ বলে মনে করে ৬০ শতাংশ মানুষ।
তবে ৯৬ শতাংশ মানুষ মনে করে করোনাভাইরাস মোকাবেলা এবং এর প্রভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার পর্যাপ্ত সহায়তা দিচ্ছে না সাধারণ মানুষকে।
এর বাইরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের সাধারণ ছুটির ঘোষণাকে সমর্থন করেন ৬৮ শতাংশ মানুষ।
কিন্তু ৬.১ শতাংশ মানুষ এই সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন না।
এক শতাংশ মানুষ একে ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন।
আবার সাধারণ ছুটির মেয়াদ কতদিন হওয়া উচিত তা নিয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মতামত।
জরিপে অংশ নেয়া মানুষের প্রায় ৫৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন সাধারণ ছুটির মেয়াদ ১৫ থেকে এক মাস হওয়া উচিত।
নয় শতাংশ মানুষ মনে করেন সাধারণ ছুটি ৩০ দিনের বেশি হওয়া উচিত।
তবে সরকারি সহায়তা বলতে জরিপে অংশ নেয়া মানুষেরা মনে করেন খাদ্য সাহায্য, নগদ অর্থ সহায়তা, ন্যায্য মূল্যে পণ্য ক্রয়ের সুবিধা ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার জন্য সরকারের এখুনি উদ্যোগ নেয়া উচিত।
এর মধ্যে ৪৭ শতাংশ মানুষই মনে করেন সরকারের খাদ্য সহায়তা দেয়া শুরু করা জরুরি।
খাদ্য সহায়তার পক্ষে গ্রামের অংশ গ্রহণকারীরা বেশি মত দিয়েছেন।
নগদ আর্থিক সহায়তা চান ২০ শতাংশ মানুষ।
আয় হ্রাস
জরিপে দেখা গেছে, ইতিমধ্যেই করোনাভাইরাসের প্রভাবে মানুষের আয়-রোজগারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে জরিপে অংশ নেয়া মানুষের গড় আয় ছিল ১৪,৫৯৯ টাকা।
করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু পর এই অংশগ্রহণকারীদের ৯৩ শতাংশের আয় কমে গেছে।
পরের মাসে অর্থাৎ মার্চে তাদের গড় আয় দাঁড়িয়েছে ৩,৭৪২ টাকায়।
এদের মধ্যে চট্টগ্রাম, রংপুর এবং সিলেট বিভাগের মানুষের আয় কমেছে সবচেয়ে বেশি।
সরকারি ছুটি এবং অবরোধের কারণে অনেকেই কাজ হারিয়েছেন অথবা তাদের কাজ কমে গেছে। আট শতাংশ মানুষের কাজ আছে কিন্তু তারা বেতন পাচ্ছেন না।
মানুষ তথ্য জানে
জরিপে মতামত দেয়া মানুষের মধ্যে প্রায় শতভাগ অর্থাৎ ৯৯.৬ শতাংশ মানুষ করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানেন এবং কিভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে হবে, সে বিষয়ে জানেন প্রায় অর্ধেক মানুষ অর্থাৎ ৪৯ শতাংশ মানুষ।
যাদের অধিকাংশই অর্থাৎ ৬৬ শতাংশ মানুষ বিষয়টি জেনেছেন টেলিভিশনের মাধ্যমে।
সুপারিশ
এই সমস্যা পর্যালোচনা করে বেশ কয়েকটি সুপারিশ দিয়েছে ব্র্যাক। এসব সুপারিশ বর্ণনা করছিলেন ব্র্যাকের পরিচালক কে এ এম মুরশিদ।
করোনাভাইরাস সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা ও অহেতুক ভীতি কাটাতে হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা সুস্থ হয়েছেন, তাদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করতে হবে, ভুল তথ্যগুলো দূর করতে হবে। তাহলে তাহলে জনগণ আর রোগটি লুকানোর চেষ্টা করবে না।
অনেকের বাড়িতে পর্যাপ্ত খাবার নেই। এদের কাছে খাবারটা পৌঁছাতে হবে। না হলে তাদের ঘরে রাখা যাবে না। এটা শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত সমস্যা নয়, মানবিক সমস্যা।
যারা গ্রামে ফিরে গেছেন, তারা সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কারণ সেখানেও কোন কাজ নেই। অনেকে হয়তো মাটি কাটার কাজ করছে। তারা কোন সেফটি নেটের ভেতরেও নেই। তাদের তাদের সেফটি নেটের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
বোরো চাষের ক্ষেত্রে অগ্রিম কেনার ব্যবস্থা চালু করা যায়। এছাড়া শ্রমিকরা যাতে ধান কাটতে যেতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।
খামারিদের অবস্থা খুব খারাপ। সবজি চাষী, ছোট দোকানদার, ব্যবসায়ী সবার অবস্থাই খারাপ। তাদের জন্য সরবরাহ চেইনটা রক্ষা করতে হবে। এগুলো নিয়ে আলাপ করা দরকার। সূত্র: বিবিসি বাংলা।