এনআইডি সেবা ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিতে সংসদে বিল

অনলাইন ডেস্ক: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিতে সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সোমবার ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন’ নামের বিলটি সংসদে উত্থপন করেন। ২০১০ সালের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন রদ করে নতুন এই আইন করা হচ্ছে। এই আইনের মাধ্যমে জন্মের পর পরই নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র পাবে।

পরে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য পাঁচ দিনের সময় দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিলটি উত্থাপনের বিরোধীতা করে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, এই কাজটি শুরু থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে ছিল। এ জন্য তারা হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে দেশজুড়ে স্থাপনা তৈরি করছে। সুষ্ঠু ভোটার তালিকা তৈরি ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। এই কাজ সরকার নিয়ে গেলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তা ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আবার দেশজুড়ে স্থাপনা তৈরি করতে হবে।

জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, নির্বাচন কমিশন শুধু ভোটার তালিকা করবে। পরিচয়পত্র সব নাগরিককে দেওয়া হবে। কোনো নাগরিকের ১৮ বছর বয়স হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় নাম উঠে যাবে। এটা আন্তর্জািতিক মানদণ্ড রক্ষা করেই করা হচ্ছে। এখানে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।

এখন এনআইডি দিয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন। নতুন আইনটি কার্যকর হলে ইসি সে ক্ষমতা হারাবে। বিলে বলা হয়েছে, বিদ্যমান আইনটি রহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কাছে রক্ষিত এবং নির্বাচন কমিশমের মাধ্যমে সংগৃহীত জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সকল তথ্য–উপাত্ত নিবন্ধকের নিকট হস্তান্তরিত হবে।

বিলে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য একজন নিবন্ধক থাকবেন। তিনি সরকারের মাধ্যমে নিযুক্ত হবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন প্রত্যেক নাগরকিকে পরিচয় নিবন্ধন করতে হবে। এ জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিবন্ধকের কাছে আবেদন করতে হবে। একজন নাগরিককে নিবন্ধক একটি নাম্বার দেবেন। সেটা একক পরিচিতি নাম্বার (ইউনিক আইডেনটিফিকেশন নাম্বার) হিসেবে সবখানে ব্যবহৃত হবে।

বিলে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক নিবন্ধক প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত প্রদান করবে। এ জন্য নিবন্ধকের কার্যালয়ের অধীন একটি সেল থাকবে। এই সেলে নির্বাচন কমিশনের এক বা একাধিক কর্মচারি দায়িত্ব পালন করবে।

বিলে বলা হয়েছে, নিবন্ধন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, সমন্বয় ও পরিবীক্ষণের জন্য একটি সমন্বয় কমিটি থাকবে। এই কমিটির সভাপতি হবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব। নিবন্ধক হবেন এই কমিটির সদস্য সচিব। নির্বাচন কমিশন ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন সদস্য।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগ উক্ত দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বিবেচিত বিধায় সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাধ্যমে এই সেবাটি জনগণের নিকট পৌছে দেওয়ার উদ্দেশে বর্তমান আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন। সব বয়সের নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০’ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে হালনাগাদ করে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ প্রণয়নের উদ্যোগ সময়োপযোগী। এটা প্রত্যেক নাগরিককে নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে নিবন্ধিত হতে এবং এর ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি ও সরবরাহের কাজ ছিল নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তবে এই দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে দিতে চাইছে সরকার। এর আগে গত বছর ১০ অক্টোবর এনআইডি তৈরির কাজটি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে আনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। অবশ্য আইন না হওয়া পর্যন্ত এই কাজ ইসির অধীনেই থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares
Verified by MonsterInsights