উপকূলকে শক্তিশালী করতে গিভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের বৃক্ষরোপণ

শ্যামনগর প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় গিভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) “প্রজেক্ট অক্সিজেন ৩.০” আয়োজন করেছে। এই আয়োজনের মাধ্যমে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ৩,০০০  গাছের চারা রোপণ করা হয়।

স্কুল-কলেজকে প্রাধান্য দিয়ে শ্যামনগর উপজেলার ৩৫টি ভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। এই অঞ্চলের মাটির লবনাক্ততা বেশি বলে লবনাক্ততা সহিষ্ণু গাছকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কদবেল, আমলকী, দেবদারু, লম্ব, মেহগনি, রঙ্গন, অলকানন্দা, নিম, সফেদা এবং পেয়ারা। ইভেন্টটিতে মাঠ পর্যায়ে সহায়তা দিয়েছে সাতক্ষীরার স্থানীয় এনজিও লিডার্স (LEDARS)।

এছাড়াও ইভেন্টটির অর্থায়নে গিভ বাংলাদেশকে সাহায্য করেছে ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম ট্রাস্ট এবং কেকেএফ। প্রজেক্ট অক্সিজেন এর মাধ্যমে দেশের তরুনদের একত্রিত করা হয়েছে। এই ইভেন্টে গিভ বাংলাদেশের সাথে কাজ করেছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সচেতনতা তৈরির জন্য সক্রিয়ভাবে পাশে ছিলো মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং হারম্যান মেইনার স্কুল ও কলেজ এর শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে, আয়োজনটির জন্য গিভ বাংলাদেশ এর তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে। একইসাথে, স্থানীয় তরুনদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনের মাধ্যমে ইভেন্টটি সফলভাবে শেষ করা সম্ভব হয়েছে।এই ইভেন্টে হারম্যান মেইনার স্কুল এর ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী মাফরুহ তাসকিন একজন “স্টুডেন্ট এ্যাম্বাসেডর” হিসাবে ছিলো।

প্রজেক্ট অক্সিজেন নিয়ে জানতে চাওয়া হলে মাফরুহা বলেন আমার জীবনে এটা ওয়ান্স-ইন-এ-লাইফটাইম ভলান্টিয়ারিং অভিজ্ঞতা ছিল। অল্প বয়সে এমন একটি অসাধারণ উদ্যোগের সাথে জড়িত থাকতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।”

জিবিএফ এর কি-একাউন্টস কোঅর্ডিনেটর ফারিহা আহমেদ জলবায়ু পরিবর্তনে গিভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেন- “বাংলাদেশে পরিকল্পিত বৃক্ষরোপন এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমাদের কর্মপরিকল্পনায় সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকাগুলো সবসময় প্রাধান্য পেয়ে এসেছে।”

 

সংগঠনটির কো-ফাউন্ডার ও প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ মিঠু এই উদ্যোগে অংশগ্রহণের জন্য সকল অংশীদারকে ধন্যবাদ জানান। একইসাথে বলেন প্রজেক্ট অক্সিজেন ৩.০ প্রমাণ করে যে, একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উন্নয়নের পথে আসা চ্যালেঞ্জ সহজেই মোকাবেলা করা যেতে পারে। লিডার্স এর নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল সাতক্ষীরার জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। কেকেএফ-এর নির্বাহী পরিচালক, সিফাত-ই-আজম পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সম্মিলিতভাবে কাজের প্রতিজ্ঞা করেন।

ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম ট্রাস্টের ভাইস-প্রেসিডেন্ট রবিউল ইসলাম একটি পারিবারিক উদ্যোগ
থেকে এমন বহুমুখী অংশীদারিত্বের অংশ হতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

প্রজেক্ট অক্সিজেন এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য দুটি- জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকায়
পরিকল্পিত বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে উপকূলকে শক্তিশালী করা
এবং পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে স্থানীয় সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন। ৩০০০ গাছ লাগানোর মাধ্যমে এই ইভেন্টটি উপকূলীয় অঞ্চলগুলোকে ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য আরো শক্তিশালী করে তুলবে।

একইসাথে, রোপণ করার পর গাছগুলোর যথাযথ পরিচর্যার জন্য স্থানীয়দের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া
হয়েছে। ফলগাছগুলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করবে।

২০২০ সালে ইমার্জেন্সি রেসপন্স এর অংশ হিসাবে প্রজেক্ট অক্সিজেন চালু করা হয়। বাংলাদেশের
উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে খুলনার কয়রাতে স্বাধীনতার ৪৯তম বছরে ৪৯ মিনিটে ৪৯,০০০ গাছ রোপন করা হয়। ২০২১ সালে প্রজেক্ট অক্সিজেন ২.০ এর আওতায় খুলনার ডুমুরিয়ায় ১৬০০ গাছের চারা লাগানো হয়। গিভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন প্রজেক্ট অক্সিজেন এর মাধ্যমে আগামী ১০ বছরে ৫ লাখ গাছ লাগানোর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অনুদান ও স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে বিশ্বের সকল প্রান্তের বাংলাদেশীদের দেশের উন্নয়নে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার একটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী পন্থা প্রদানের উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালে গিভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।

ইমার্জেন্সি রেসপন্স ছাড়াও গিভ বাংলাদেশ এর পাঁচটি প্রজেক্ট রয়েছে। প্রজেক্ট ফলন কৃষকদের
মূলধনের নিশ্চয়তা, কৃষি দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ, আর্থিক ব্যবস্থাপনা- এই বিষয়গুলো নিয়ে
কাজ করে থাকে। প্রজেক্ট “পথচলা” যৌনকর্মীদের শিশুদের তাদের সামর্থ্য খুঁজে পেতে এবং সমাজের মূল স্রোতের সাথে মিশতে সহায়তা করে। সুপেয় পানিসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য প্রজেক্ট অম্বু স্থানীয় গোষ্ঠী ও জাতীয় পর্যায়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে কাজ করে থাকে। প্রজেক্ট কন্যা বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে কিশোরী ও প্রাপ্তবয়স্কা নারীদের নিরাপদ মাসিক স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করে থাকে। প্রজেক্ট লড়াই প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

গিভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন প্রত্যেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার
আহ্বান জানায় এবং পরিবর্তন আনতে পারে এমন উদ্যোগে যেকোনো সহযোগিতাকে স্বাগতম জানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares
Verified by MonsterInsights