ইবিতে পোষ্য কোটায় অযোগ্যদের ভর্তির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি শিক্ষার্থীদের
ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের পোষ্য কোটায় ভর্তির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছে তারা।
সোমবার (২০ নভেম্বর) সকাল ১১ টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে এই দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা৷ এতে একাত্মতা পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে বেলা ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির এক সভায় পোষ্য কোটায় অকৃতকার্যদের ভর্তির সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গুচ্ছের অধীনে ভর্তি প্রক্রিয়া গত ১৯ অক্টোবর শেষ হয়েছে । ইতোমধ্যে অনেক বিভাগই ইনকোর্স, ল্যাব, প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা শেষে সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এখনো পোষ্য কোটার নামে কর্মকর্তা কর্মচারীদের অকৃতকার্য সন্তানদের ভর্তিতে তৎপর কর্মকর্তা সমিতি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শর্ত পূরণ করে পাশ নম্বর পেয়ে পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন ২০ জন শিক্ষার্থী।
তবে, পোষ্য কোটার জন্য নির্ধারিত ৩০ নম্বরও যারা পায়নি, তাদের ভর্তি করাতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷ পোষ্য কোটায় অকৃতকার্যদের ভর্তি নেওয়ার ব্যাপারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, এটা কোন ডিগ্রী কলেজ বা কোন অনার্স কলেজ না। পোষ্য কোটার সুযোগ পেয়েও যারা গুচ্ছের পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি তারা কোনভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। এমন অযোগ্যদের ভর্তি করালেও তারা বিভাগের পড়াশোনায় তাল মেলাতে পারে না। পরীক্ষা দিতে না পারা বা ইম্প্রুভমেন্ট পরীক্ষা নিতে যেয়ে বাকিদের ক্লাস/পরীক্ষা দেরিতে নেওয়া হয়। এতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভুগতে হয়, সময়মতো শিক্ষা-কার্যক্রম শেষ করতে না পারায় সেশনজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে, শিক্ষার্থীরা দাবি পেশ করার পর বেলা ১২ টায় প্রশাসন ভবনের সভাকক্ষে পূর্বনির্ধারিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোঃ আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ.এম আলী হাসান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যবৃন্দ এবং বিভিন্ন বিভাগের সভাপতি ও শিক্ষকবৃন্দ।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে পোষ্য কোটায় অকৃতকার্যদের ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সময় স্বল্পতার কারণে এবং ইবি গুচ্ছের অধীনে ভর্তি প্রক্রিয়ায় যাওয়ায়, গুচ্ছের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু গুচ্ছের ভর্তি শেষ তাই এখন আর বিষয়টা নিয়ে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। যারা নিয়ম মেনে পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন সেটাই চুড়ান্ত। সভায় উপস্থিত একাধিক সুত্র ও রেজিস্টার দপ্তর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ.এম আলী হাসান বলেন, সভার সিদ্ধান্ত রেজুলেশন আকারে প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কিছু বলা ঠিক হবে না। তবে সভায় উপস্থিত সবাই বলেছে গুচ্ছ পদ্ধতির বাইরে যেয়ে ভর্তি নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
এবিষয়ে কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি ও ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক এ টি এম এমদাদুল আলম বলেন, আমরা শুনেছি যে এবছর পোষ্য কোটায় আর শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না। যদি এ ধরণের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে তবে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করব। এমন সিদ্ধান্তে আমরা আহত ও অখুশি। আমাদের পরবর্তী সভায় এবিষয়ে আমরা করণীয় নির্ধারণ করবো।
এবিষয়ে গণমাধ্যম ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, আবেদনের যোগ্যতা থাকলেই ভর্তি, পৃথিবীর কোথাও এমন নিয়ম নেই। কোটায় নম্বর কমিয়েও শিক্ষার্থী ভর্তির কোনো সুযোগ নেই। গুচ্ছ কেন্দ্রীয় কমিটি যে নম্বর নির্ধারণ করে দিয়েছে সেটাই চূড়ান্ত।
উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, গুচ্ছের নিয়মের কারণে এবছর শর্তের বাইরে গিয়ে আর পোষ্য কোটায় ভর্তি সম্ভব না। সকালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসেছিল, নিয়ম ভেঙ্গে পোষ্য কোটায় ভর্তি নেওয়া হলে তারা কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন। তাছাড়া পোষ্য কোটায় ভর্তির বিষয়টা আজ ইবির কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটিতে আলোচনা করা হয়েছে, সেখানে তারা শর্ত শিথিল করে ভর্তির বিষয়ে রাজি হয়নি। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, এবছর পোষ্য কোটায় ৩০ নম্বরের নিচে প্রাপ্তদের ভর্তি নেওয়া বাঞ্চনীয় হবে না।