আজ জাতীয় কবির ৪৪তম মৃত্যু বার্ষিকী
নিউজ ডেস্ক
আজ ১২ ভাদ্র। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনার এক বছর পর ১৯৭৬ সালে শোকের মাসেই শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। নজরুলের চেতনা ও আদর্শ বাঙালির জীবনে চিরন্তন, বাংলাদেশের উত্থান-পতনময় সংগ্রামী ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিণী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীত জগৎকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে
জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ দুই বাংলাতেই তার কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। বাংলা কবিতায় তিনি এনেছিলেন সম্পূর্ণ নতুন এক সুর, ছিলেন মানবতার উচ্চকণ্ঠ প্রচারক, গানে মিশিয়েছিলেন বিচিত্র ধারা। তাই তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে ‘বিদ্রোহী কবি’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নির্মম দারিদ্র্য থেকে অসামান্য প্রতিভায় তিনি অভিষিক্ত হয়েছেন মহাপুরুষের আসনে। আজীবন সংগ্রাম করেছেন শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য। সোচ্চার ছিলেন সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপম-ূকতার বিরুদ্ধে। তরুণদের কাছে তিনি বিদ্রোহের অনন্ত প্রতীক।
মধ্যবয়সে কাজী নজরুল ইসলাম পিকস ডিজিজে আক্রান্ত হন। বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবিকে সপরিবারে সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি দেন।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ ও আলোচনাসভা। সকাল সাড়ে ১০টায় প্রশাসনিক ভবনস্থ অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাস রুমে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে সেই আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলা একাডেমি কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচির আয়োজন করেছে। সকালে একাডেমির পক্ষ থেকে সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বেলা ১১টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে স্বাগত বক্তব্য দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। একক বক্তব্য দেবেন এএফএম হায়াতুল্লাহ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে নজরুলের কবিতা থেকে আবৃত্তি এবং নজরুলগীতি পরিবেশনা।