আঁচল কেন্দ্রে নিরাপদ শিশুরা

শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর : শেরপুর জেলাজুড়ে অসংখ্য খাল-বিল, নদী-নালাসহ ডোবা রয়েছে। আর এসব স্থানে প্রায় সময়ই পানিতে ডুবে মৃত্যুর খবর পাওয়া যেতো। কিন্তু বর্তমানে পাল্টে গেছে সেই চিত্র। নিরাপদ শিশু কেন্দ্র বা ‘আঁচল কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর কমেছে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা। বাংলাদেশ সেন্টার ফল ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ (সিআইপিআরবি) নামে একটি সংগঠনদের সহযোগিতায় আঁচল কেন্দ্র।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলার বেশিরভাগ জায়গায় রয়েছে নদী-নালা, খাল-বিল ও ডোবা। আর এসব জায়গায় আগে পানিতে ডুবে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও এখন আর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় না। কারণ, প্রায় প্রতিটি এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে নিরাপদ শিশু কেন্দ্র বা ‘আঁচল কেন্দ্র’। আর স্থানীয়রা পরিবারের ব্যস্ত সময় শিশুদের সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে নিরাপদে থাকে।শেরপুুরে অবস্থিত সিআইপিআরবি’র তথ্যানুযায়ী, সদরের সাতটি ইউনিয়নে মোট ৫৩২টি আঁচল কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি আঁচল কেন্দ্রে ২০ থেকে ২৫জন শিশু রয়েছে। এসব ইউনিয়নে আঁচলের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি। গত ২০২০ থেকে চলতি বছরের ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাত্র ২০জন পানিতে ডুবে এবং অন্যান্য কারণে মারা গেছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সদর উপজেলার রঘুনাথপুর শোলারচর গ্রামের হাজিপাড়ায় আঁচল কেন্দ্রে ছোট্ট শিশুরা ছন্দে ছন্দে শিখছে ছড়া, কবিতাসহ অংক। আঁচল মা শিশুদের আনন্দের সাথে যতœ সহকারে তা শিখাচ্ছেন। আবার বাইরে কয়েকজন শিশু একসাথে হয়ে খেলা করছে, তাদেরকে দেখাশোনা করছে আঁচল মা। ওই কেন্দ্রের আঁচল মা নিপা বেগম বলেন, আঁচলে শুধু শিশুদের বসিয়ে রাখা হয় না,প্রাক-প্রাথমিকের নানা শিক্ষাও দেওয়া হয়। প্রতি সপ্তাহে ছয় দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৯ মাস থেকে তিন বছর বয়সী শিশুদের আঁচলে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে চার-পাঁচ বছরের শিশুরাও আঁচলে আসে।

শোলারচর গ্রামের বাসিন্দা অজুফা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে এই কেন্দ্রে রেখে আমি অন্যান্য কাজ করি। আমার মেয়ে নিরাপদে থাকে তাদের কাছে। আমি খুব খুশি। হাজিপাড়ায় বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, আঁচল কেন্দ্র হয়ে আমাদের খুবই উপকার হয়েছে। এখন বাচ্চার মা ওই কেন্দ্রে রেখে বাড়ির কাজ করে। আমিও বাইরে চিন্তামুক্ত থাকতে পারি। শুধু যে ওই কেন্দ্রে শিশু থাকে তাও না, সেখানে ছোট থেকেই তারা পড়া শিখছে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সমষ্টির তথ্য মতে, গবেষণায় দেখা গেছে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার সব চেয়ে বেশি। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, এই সময়ে শিশুর মা-বাবা গৃহস্থালির কাজে ব্যস্ত থাকেন। যার কারণে এই সময়টা শিশুদের জন্য বিপদজনক সময়। তাই সিআইপিআরবি কর্তৃক ঝুঁকিপূর্ণ এই চার ঘণ্টা একটি নির্দিষ্ট স্থানে শিশুদের রাখা ও শিক্ষামূলক নানা কাজে অন্তর্ভুক্ত করার কর্মসূচির নামই আঁচল।

সদর উপজেলা সিআইপিআরবি কার্যালয়ের সমন্বয়ক মো. আব্দুল্লাহ আল কাফি বলেন, এই আঁচল কেন্দ্রের কারণে সদরে পানিতে ডুবে মৃত্যু অনেকটাই কমে গেছে। পাশাপাশি আঁচল কেন্দ্রের আশপাশে শিশুদের পরিবার অনেক সচেতন হয়েছেন। এই আঁচল কেন্দ্রে একদিকে যেমন শিশুরা নিরাপদে থাকছে, অন্যদিকে শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাও পাচ্ছে। আর প্রতিটি আঁচল কেন্দ্রের আঁচল মা ও একজন সহকারী ইনক্লুসিভ ট্রেনিং নিয়ে তারপর আঁচল কেন্দ্র পরিচালনা করেন।এই কেন্দ্র পরিচালনায় তারা দু’জনই পান মাসিক সম্মানী। প্রতিটা আঁচল মা সর্বনিম্ম দশম শ্রেণি ও সহকারী পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া জানতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares
Verified by MonsterInsights