অভিনয়-যুগের কবি
অভিনয়-যুগের কবি
গোলাম মোস্তফা
আমি এক অভিনয়-যুগের কবি
কবিতা লেখা আমার নিত্যদিনের হবি।
না লিখলে কবিতা হয় না আমার ঘুম
তাই তো আমি ছন্দ খুঁজে ফিরি হরদম।
দেশের কথা মানুষের কথা
ফুটাইয়া তুলিতে চাই ছন্দে
লিখতে গিয়া কী লিখবো কার জন্য লিখবো
পড়ে যাই দ্বন্দ্বে।
চোখের সামনে দেখি—
দেশের অধিকাংশ মানুষের পেটে নেই ভাত
নেই জীবনের কোনো নিশ্চয়তা
আর স্বর্গসুখে বিভোর কিছু লোক সবসময়
শুনিয়ে যাচ্ছে রূপকথার নানা গল্পকথা।
ওরা রাগে না হেরে যায় না
করে নিখুঁত অভিনয়,
এটা দেখে কতিপয় উচ্ছিষ্টভোগী
তিন নম্বর বাচ্চার মতো লাফায়।
আমি এক মিথ্যা-যুগের কবি
কবিতা লেখাই আমার নিত্যদিনের হবি।
ওরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির কুমিরছানায়
প্রবৃদ্ধি আর জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির নিত্য গল্প শোনায়।
ওরা কিছু সুরম্য অট্টালিকা, ওভারব্রিজ আর
পদ্মাসেতুর পরিয়ে ঢুলি
হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে
বিদেশে রাজপ্রাসাদ গড়ছে তুলি।
চোখ-কান খোলা আমার বুঝি আমি সবই
আমি এক অভিনয়-যুগের কবি।
ওরা জনগণ থেকে কর নেয় ,
করে বানরের মতো পিঠা ভাগ
কৃষকের কাছ থেকে যে সুদ নেয়,
ব্যবসায়ীর থেকে নেয় অর্ধেক।
ওরা ত্রাণের নামে দেয় ভিক্ষা, দেয় না
শ্রমিকের বেঁচে থাকার মজুরি
তাই তো করোনায় শ্রমিকের প্রাণসংহারে
ওদের নেই কোনো আহাজারি।
আমি সবই বুঝি সবই দেখি —
কবিতা লেখাই আমার হবি।
আমি অভিনয়-যুগের কবি।
ওরা নিত্যপণ্যের বাজার ঠিক করার নামে
কান ফাটানো ঢাকঢোল বাজায় প্রায়ই,
পকেটে যা তোলার ব্যবসায়ীরা
তুলে নেয় তা আগেই।
ঘোড়ার আগে গাড়ি জুতে চলছে আমার দেশ
টিসিবি এখন ঠুটো জগন্নাথ—আহা বেশ বেশ!
আমি এক অভিনয়-যুগের কবি
কবিতা লেখা আমার নিত্যদিনের হবি।।